ফাইল চিত্র।
ফের কর্তব্যরত অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তারের উপর হামলার অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত এক মাসে এ নিয়ে চার বার এমন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক ঘটনায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহলও।
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক বলেন, “চিকিৎসক-নিগ্রহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সবাইকে বুঝতে হবে, চিকিৎসকদেরও বাধ্য বাধ্যকতা রয়েছে। হাসপাতালে এসে অকারণে ধৈর্যচ্যুতি ঘটালে হবে না।’’
রবিবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডের ৩ ও ৪ নম্বর ব্লকের সামনে মদ্যপ অবস্থায় ৪-৫ জন যুবক বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে হুজ্জতি করছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁদের ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসকেরা। শুরু হয় বচসা। অভিযোগ, তখনই ওই মদ্যপ যুবকেরা ইন্টার্ন শুভজিৎ মিত্রের জামার কলার ধরে হেনস্থা করে। তাঁকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে প্রথমে নিরাপত্তারক্ষীরা ও পরে পুলিশ ছুটে এলে মদ্যপরা পালিয়ে যায়। তবে লক্ষ্মীপুর মাঠের বাসিন্দা ছোট্টু মাল বলে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ধৃতকে সোমবার আদালতে তোলা হলে জামিন পান তিনি।
ধৃতের জামিন পেয়ে যাওয়া নিয়েও চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, একের পর এক চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ অভিযুক্তদের ধরলেও ‘হালকা’ ধারা দিয়ে আদালতে পাঠানোর জন্য জামিন পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। অথচ অন্য ব্লক বা মহকুমা শহরে চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনা ঘটলে এমন ঘটে না বলেও তাঁদের দাবি। তাঁরা জানান, গত শনিবার রায়না ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তুষারকান্তি বিশ্বাস নামে এক চিকিৎসকের উপর হামলার অভইযোগ ওঠে নাড়ুগ্রামের মহাদেব রাউতের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় বর্ধমান আদালত অভিযুক্তকে জেল হাজত দেয়। অথচ বর্ধমান থানায় চিকিৎসক নিগ্রহের অভিযোগে কেউ গ্রেফতার হলে জামিন পেয়ে যায়।
কয়েক দিন আগে বর্ধমানের আইসির বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন বর্ধমানের নার্সিংহোমের মালিকরা। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে চিকিৎসক নিগ্রহ নিয়ে পুলিশকে কড়া অবস্থান নিতে বলছে সেখানে বর্ধমান থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। যদিও বর্ধমান থানার এক কর্তা জানান, চিকিৎসকরা যেমন অভিযোগ দেন, সে রকমই ধারা দিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়েরও দাবি, চিকিৎসক-নিগ্রহ নিয়ে কড়া ভূমিকা পালন করা হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুন রাধারানি ওয়ার্ডে কীটনাশক পান করে ভর্তি হন বাবুরবাগের এক দম্পতি। তাঁদের পরিজনরা চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে প্রথমে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধর করে। আটকাতে গিয়ে প্রহৃত হন নিরাপত্তারক্ষী থেকে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করে। ১১ জুন জরুরি বিভাগের তিন তলায় অস্থি ওয়ার্ডের বারান্দায় ভর্তি ছিলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার এক রোগী। তাঁকে ঘিরে থাকা পরিজনেদের সরতে বলার জন্য প্রবীণ চিকিৎসক কৃষ্ণকমল দেকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে প্রহৃত হয় আরও চার চিকিৎসক। এই ঘটনাতেও পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। ১৭ জুন আইসিসিইউতে রোগীকে পাঠানোর দাবি করেও দুই জুনিয়র ডাক্তারের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ দু’জনকে ধরলেও তাঁরা জামিন পান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, প্রতিটি ঘটনাতেই পুলিশ প্রশাসন দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy