Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সিবিএসই পাঠ্যক্রম, বিতর্ক স্কুলে

রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের (সিবিএসই) অনুমোদন নিয়ে আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ স্কুলের পড়াশোনা হবে ইংরেজি মাধ্যমে।

আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ স্কুল। নিজস্ব চিত্র

আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ স্কুল। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

রেল কর্তার যুক্তি, বাংলা মাধ্যমে না কি পড়ুয়া ভর্তি হচ্ছে না। আর সেই ‘যুক্তি’তেই ১৩২ বছরের পুরনো আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ হাইস্কুলে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা মাধ্যমের বদলে শুরু হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা। রেলের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবকদের একটা বড় অংশই।

রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের (সিবিএসই) অনুমোদন নিয়ে আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ স্কুলের পড়াশোনা হবে ইংরেজি মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ডিআরএম (আসানসোল) প্রশান্তকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় বাংলা ভাষার পড়ুয়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আসানসোল ডিভিশনের তরফে এটিকে সিবিএসই করার প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।’’ স্কুলের প্রাথমিক বিভাগও ইংরেজি মাধ্যম হয়ে যাবে।

কিন্তু ডিআরএম-এর এই যুক্তি মানতে নারাজ শহরের শিক্ষকেরা। তাঁরা জানান, স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭-য় হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিভাগ মিলিয়ে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬০০ জন। এর মধ্যে প্রায় ১০৫০ জন বাংলা মাধ্যমের ও প্রায় ৫৫০ জন হিন্দি মাধ্যম। ২০১৭-য় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় প্রায় ১১০ জন বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়া। ২০১৮-য় প্রথম শ্রেণিতে বাংলা মাধ্যমে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫ জন। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে চিঠি লিখছি। আবেদন শোনা না হলে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হবে।’’ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর কাছে স্কুলের ৩৩ জন শিক্ষক, শিক্ষিকারা চিঠিও পাঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু করেছে ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোহর শমণ্ডলের প্রশ্ন, আসানসোলে রেলের তত্ত্বাবধানে থাকা সিবিএসই বোর্ডের স্কুল রয়েছে। তাহলে এই স্কুলকেও কেন তা করতে হবে। শুধু তাই নয়, ওই সংগঠনটি জানায়, এত দিন রেলকর্মীদের সন্তানেরা ছাড়াও বহিরাগতদের ভর্তি নেওয়া হত। এত বছর পরে সেই সামাজিক দায় পালন না করতে বহিরাগতদের ভর্তি নেওয়া বন্ধ করা হচ্ছে।

রেল কর্মচারী ও স্থানীয় এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য ১৮৮৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে এই স্কুল তৈরি হয়েছিল। ১৮৯৯-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে পঠনপাঠন চলতে থাকে। পরে ১৯৫৪-য় স্কুলের অনুমোদন দেয় পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এত দিন বাংলা মাধ্যমেই পড়াশোনা হয়ে আসছে এই স্কুলে। শুধু তাই নয়, বিমল কর, নারায়ণ সান্যালের মতো বাংলা সাহিত্যের ব্যক্তিত্বেরাও পড়াশোনা করেছেন এই স্কুলে।

রেলের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তে অবাক প্রাক্তনীরাও। স্কুলের প্রাক্তনী কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন জীমূতবাহন গুপ্ত বলেন, ‘‘বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, এই সিদ্ধান্ত শুনে অবাক হচ্ছি। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাব।’’ একই কথা বলেছেন আসানসোল পুরসভার অধ্যক্ষ অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক বরুণ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ভাবতেই অবাক লাগছে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা হওয়ার এত বছরের ঐতিহ্যকেই বিলোপ করতে চাইছেন রেল কর্তৃপক্ষ। আমরা, প্রাক্তনীরা এর বিরুদ্ধে পথে নামব।’’

বিষয়টি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও লিখিত কিছু পাইনি। তবে ডিসেম্বরেই নির্দেশ আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBSE Asansol Asansol School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE