প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস নিয়ে ‘সতর্কতামূলক’ পদক্ষেপ হিসেবে ইতিমধ্যেই আসানসোল মহকুমায় ১৪টি এবং দুর্গাপুর মহকুমায় সাতটি রক্তদান শিবির বাতিল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন এবং চিকিৎসকদের একাংশের আশঙ্কা, রক্তের আকাল দেখা যেতে পারে পশ্চিম বর্ধমান জুড়ে।
আসানসোল জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল পর্যন্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে ও+, বি+ শ্রেণির রক্ত ১০ ইউনিট এবং ও- শ্রেণির চার ইউনিট রক্ত রয়েছে। বাকি অন্য কোনও শ্রেণির রক্তই নেই! অথচ, এখানে দিনে গড়ে ৪০ ইউনিটের মতো রক্ত লাগে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে এ+ আট, বি+ ৯৯,
এবি+ শ্রেণির ১০ এবং ৫২ ইউনিট ও+ শ্রেণির রক্ত রয়েছে।
জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে ১৯টি শিবির থেকে ৭২৪ ইউনিট রক্ত মিলেছে। গত ১৮ তারিখ শেষ রক্তদান শিবিরটি আয়োজিত হয়েছে জামুড়িয়ার বেনালি মাদ্রাসার উদ্যোগে। অথচ, গত বছর মার্চে ৩০টি শিবির থেকে ৮২১ বোতল রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। ব্ল্যাড ব্যাঙ্কের চিকিৎসক সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানান, ২০১৯-এ ৩৯৬টি শিবির থেকে ১২,৬১১ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। তাতে উপকৃত হন ১৬,৮৪৬ জন। চলতি বছরে ১৮ মার্চ পর্যন্ত একশোটি শিবির থেকে ৩,১৯০ ইউনিট রক্ত মিলেছে। প্রায় ছ’হাজার জন তা থেকে উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতি চললে চলতি বছরে গত বছরের রক্ত সংগ্রহের পরিমাণও ছুঁতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে ডাক্তারদের একাংশের মধ্যে।
একই পরিস্থিতি দুর্গাপুরেও। শিবির বাতিল হওয়ায় এখানেও রক্তের আকালের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম সূত্রের খবর, ১১ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত দুর্গাপুর হাসপাতালে মোট ১৩টি রক্তদান শিবির হওয়ার কথা থাকলেও সাতটি শিবির বাতিল হয়েছে। তবে পাঁচটি শিবির থেকে প্রায় একশো ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
জেলায় রক্তের এই আকাল প্রসঙ্গে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাসের আশঙ্কা, ‘‘আমরা প্রচার করছি, ছোট আকারে শিবির আয়োজন করা হোক। না হলে রক্তের অভাবে প্রসূতি, থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং দুর্ঘটনাগ্রস্তেরা প্রাণ সংশয়ে পড়তে পারেন।’’
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু পদক্ষেপও করা হচ্ছে। ‘দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর সভাপতি কবি ঘোষের আহ্বান, ‘‘ভীতি ত্যাগ করে উপযুক্ত সাবধানতা মেনে সবাই রক্তদান করতে এগিয়ে আসুন।’’ ফোরাম জানায়, রক্তের জোগান নিশ্চিত করতে ছোট আকারে শিবির হচ্ছে। শিবিরে দু’টি শয্যার মাঝে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। রক্তদাতা ও ‘মেডিক্যাল টিম’-এর সবাই ‘মাস্ক’ পরছেন। শিবিরে ‘স্যানিটাইজ়ার’ থাকছে। প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর দু’জন করে রক্তদান করছেন। নিখিলবাবুও বলেন, ‘‘হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে, ‘মাস্ক’ পরে, ছোট আকারে শিবির আয়োজন করা যেতে পারে। তা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।’’ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফেডারেশন অব ভলান্টারি ব্ল্যাড ডোনার্স অর্গানাইজ়েশন’-এর সহ-সম্পাদক তণ্বিমা ধর জানান, তাঁরা রক্তদান শিবির আয়োজনের প্রচার করছেন। গত দু’দিনে তাঁরা সাত জনকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে রক্তদান করানোর ব্যবস্থা করেছেন।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রক্তদান করা নিয়ে নানা মত, দ্বিধা রয়েছে রক্তদাতা ও আয়োজকদের মধ্যে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে বলে দাবি ‘ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া’র রাজ্য সম্পাদক কবিবাবুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy