Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

রেশন কবে কতটা, স্পষ্ট নয় এখনও

রাজ্যে পাঁচটি শ্রেণির রেশন কার্ডের মাধ্যমে লোকজনকে ভর্তুকিতে মাল দেওয়া হয়।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

মনিরুল শেখ
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৫:৫৯
Share: Save:

দিন কয়েক আগেই করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলার অঙ্গ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী ছ’মাস উপভোক্তাদের গণবন্টন ব্যবস্থার অধীনে বিনামূল্যে মালপত্র দেওয়া হবে। কিন্তু কী পরিমাণে ওই মাল দেওয়া হবে বা কোন মাল দেওয়া হবে, এই মর্মে কোনও নির্দেশিকা সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খাদ্য দফতরের কর্তারা পাননি বলে জানাচ্ছেন। ফলে আজ, মঙ্গলবার থেকে রেশন দোকান থেকে লোকজনকে টাকা দিয়েই মাল কিনতে হবে বলে মনে করছেন আধিকারিকেরা।

রাজ্যে পাঁচটি শ্রেণির রেশন কার্ডের মাধ্যমে লোকজনকে ভর্তুকিতে মাল দেওয়া হয়। অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার মাধ্যমে ২ টাকা কিলোগ্রাম দরে প্রতি মাসে উপভোক্তাদের ১৯ কিলোগ্রাম করে চাল দেওয়া হয়। আর ওই একই দরে মাসে ১৫ কিলোগ্রাম করে আটা দেওয়া হয়। আর প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড কার্ড রয়েছে এমন পরিবারের লোকজনকে কার্ড পিছু মাসে ২ টাকা কিলোগ্রাম দরে ২ কিলোগ্রাম করে চাল দেওয়া হয়। আর সাড়ে তিন টাকা কিলোগ্রাম দরে ২ কিলোগ্রাম ৮৫০ গ্রাম করে আটা দেওয়া হয়। প্রায়ই একই শর্তে স্পেশাল প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড শ্রেণির কার্ডধারীদেরও খুব কম দামে খাদ্যশস্য দেওয়া হয়। এছাড়াও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ১ ও ২ এর মাধ্যমেও কম দরে চাল, গম দেওয়া হয়। জেলার অন্তত ৮০ শতাংশ লোকই কোনও কোনও কার্ডের মাধ্যমে গণবন্টন ব্যবস্থার অধীনে রেশন দোকান থেকে ভর্তুকিতে চাল, গম বা আটা পান। করোনা আতঙ্কের আবহে জেলার অসংগঠিত ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দিন দুয়েক ধরে নির্মানকর্মীরা আর কাজ পাচ্ছেন না। এ ছাড়াও বহু ছোটখোটো কারখানার দরজাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িতরাও শ্রমিকের কাজ পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় জেলার একটা বড় সংখ্যক লোকেরই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে।

চাপড়ার বাসিন্দা কামরুল বিশ্বাস বলছেন, “আমাদের এলাকায় দিন আনি দিন খাওয়া লোকের সংখ্যা প্রচুর। ভয়ের চোটে তাঁরাও এখন গৃহবন্দি। আবার তাঁদের কেউ কাজও দিচ্ছেন না। এই অবস্থায় ওই লোকগুলোর খাবার চিন্তা সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।” ফলে রেশন থেকে বিনামূল্যে মাল দিলে সুবিধাই হয় বলে মনে করছেন তিনি। জেলার খাদ্য দফতরের এক কর্তা জানান, আসলে রেশন ডিলারেরা মাসে দু’বার ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে মাল তোলেন। তারপর তা বিলি করেন গ্রাহকদের মধ্যে। মার্চ মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় দুই পক্ষের মালই ডিলারেরা টাকা দিয়ে ইতিমধ্যেই তুলে ফেলেছেন। প্রথম পক্ষের মাল ইতিমধ্যেই উপভোক্তাদের মধ্যে বিলি করা হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় পক্ষের মাল অনেক জায়গাতেই বিলি শুরু হয়েছে। আবার অনেক জায়গাতেই চলতি মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে টানা দোকান খোলা রেখে বিলি করতে হবে। এই মাসের মধ্যে মনে হয় না মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো গ্রাহকেরা বিনামূল্যে মাল পাবেন।

পাশাপাশি, বিনামূল্যে মাল বিতরণ শুরু হলে কোন শ্রেণির গ্রাহকেরা কতটা মাল বিনামূল্যে পাবেন তা-ও এখনও পরিষ্কার নয়। এ ছাড়াও ছ’মাসের মাল একেবারেই বিনামূল্যে দেওয়া হবে, নাকি ধাপে ধাপে ছ’মাস ধরে বিনামূল্যে মাল দেওয়া হবে তাও এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। দফতরের এক পরিদর্শক জানান, আসলে ছ’মাসের মাল একেবারে দিতে গেলে তা প্রথমে ডিস্ট্রিবিউটর ও ডিলারের গুদামে রাখতে হবে। ওই বিপুল মাল কিছু দিনের জন্য জমা রাখার মতো বড় গুদাম তাঁদের নেই। তাঁদের গুদামে বড়জোর মাস দুয়েকের মাল রাখা যেতে পারে। তবে এ সবই পরিষ্কার হবে নির্দেশনামা বার হওয়ার পরে। কলকাতার খাদ্য ভবনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “সোমবার এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এত দিনের মাল বিনামূল্যে দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ দফতরের তো অনুমোদন লাগবে। সে সব প্রক্রিয়া আশা করি দুই এক দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। তারপরে নির্দেশ বার হলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। তবে মনে হচ্ছে আগামী কয়েকদিন গ্রাহকদের টাকা দিয়েই মাল তুলতে হবে।” কল্যাণীর চর জাজিরার বাসিন্দা কাশীনাথ মাহাতো বলেন, “আমাদের এই চরের গ্রামের মানুষ খুবই কষ্টের মধ্যে আছেন। কাজ হারিয়ে দু’বেলা খাবার জোগাড় করার অবস্থায় তাঁরা নেই। সরকার দ্রুত বিনামূল্যে চাল-গম দিলে লোকের উপকার হত।”

নদিয়া জেলার খাদ্য দফতরের নিয়ামক লতিফ শেখ বলেন, “সরকারি অর্ডার হাতে এলেই পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হবে। এই মুহূর্তে কিছুই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE