Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘পেট চালাতে কার কাছে হাত পাতব?’

‘লকডাউন’ ঘোষণার পরেই দু’জন কারিগর বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আমি আর এক জন কারিগর পড়ে রয়েছি।

বিক্রি নেই। গোপালপুরে ‘চাকতি’ তৈরির কারখানায়। নিজস্ব চিত্র

বিক্রি নেই। গোপালপুরে ‘চাকতি’ তৈরির কারখানায়। নিজস্ব চিত্র

সোহেল খান
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০০:১০
Share: Save:

কুয়ো বাঁধাতে যে গোলাকার চাকতি দরকার হয়, গোপালপুরে আমাদের কারখানায় তা-ই তৈরি হয়। প্রতি বার গ্রীষ্মের শুরু থেকে জল-সঙ্কট দেখা দেওয়ায়, এলাকায় এমন চাকতির ভাল কদর থাকে। কিন্তু এ বার করোনাভাইরাস-পরিস্থিতিতে এই হাল হবে, টের পাইনি। কার্যত কোনও রোজগার নেই। আতান্তরে পড়েছি।

বছর সাতেক ধরে আমার ব্যবসা। সঙ্গে আরও তিন জন কারিগর রয়েছেন। গত বছর ছোট-বড় অন্তত সাড়ে চারশোটি চাকতি বিক্রি করেছিলাম। এক জন কারিগর ছিলেন। আরও বেশি চাহিদা ছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যায় কারিগর না থাকায় জোগান দিতে পারিনি। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে তাই এ বার আরও দু’জন কারিগর আনি। জানুয়ারি থেকে শুরু হয় চাকতি বানানো। এ পর্যন্ত প্রায় দু’শো চাকতি মজুত করেছি। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে ধনে-প্রাণে মারা পড়ব।

‘লকডাউন’ ঘোষণার পরেই দু’জন কারিগর বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আমি আর এক জন কারিগর পড়ে রয়েছি। নগদ টাকা থেকে কিছুটা ওই কারিগরদের দিয়েছি।

কিন্তু করোনা-পরিস্থিতি শুরুর পরে থেকেই এ পর্যন্ত একটিও চাকতি বিক্রি হয়নি। পুরো এলাকা যেন জনশূন্য। সাধারণত, মুর্শিদাবাদ থেকে শ্রমিকেরা এসে কুয়ো কাটেন। তাঁরাও এলাকা ছেড়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ফলে, কুয়ো কাটার কাজই বন্ধ। চাকতি বিক্রি হবে কী করে?

তবে মূল সমস্যাটা আর্থিক। বাজার থেকে ধার করে কাঁচামাল কিনে চাকতি বানিয়েছি। সেই টাকা শোধ করার জন্য মহাজনেরা চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু বিক্রি বন্ধ হওয়ায়, পাঁচ জনের সংসার চালাতে হাতে নগদ কমে আসছে। জানি না, এ ভাবে কত দিন চালাতে পারব!

সরকার বিপিএল তালিকায় থাকা লোকজনকে খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছে। কিন্তু আমার তো বিপিএল-কার্ড নেই। ফলে, পেট চালাতে কার কাছে হাত পাতব?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE