Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ফেরাল দুই নার্সিংহোম, মৃত্যু বৃদ্ধার

মঙ্গলবারের এই ঘটনার পরে, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু এই ঘটনায় নয়, ‘লকডাউন’ জারি হওয়ার পর থেকে জ্বর নিয়ে কেউ নার্সিংহোমে গেলেও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

জ্বর নিয়ে বাড়ির কাছেই নার্সিংহোমে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন বর্ধমানের খোসবাগানের আর বি ঘোষ রোডের এক বৃদ্ধা। অভিযোগ, তাঁকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে দুই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত অন্য একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হলেও চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়ায় ওই বৃদ্ধা মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ পরিজনেদের।

মঙ্গলবারের এই ঘটনার পরে, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু এই ঘটনায় নয়, ‘লকডাউন’ জারি হওয়ার পর থেকে জ্বর নিয়ে কেউ নার্সিংহোমে গেলেও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের একাংশের দাবি, এ ধরনের অভিযোগ আসতে পারে ভেবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত একটি বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। সেখানে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, কোনও রোগীকে ফেরানো যাবে না। কোনও রকম সন্দেহ হলে তাঁদের ‘আইসোলেশন’-এ রাখার পরে, স্বাস্থ্য দফতরে খবর দিতে হবে।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “জ্বর হলেই নার্সিংহোমে ভর্তি নেব না, এই চিন্তাভাবনা ঠিক নয়। ওই বৃদ্ধার বিষয়টি জানার জন্য রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। নার্সিংহোমগুলিকে আরও সচেতন হওয়ার জন্য বলছি।’’

বুধবারই বর্ধমানের এক চিকিৎসকের পরামর্শে কালনার সিঙ্গেরকোন থেকে জ্বর গায়ে খোসবাগানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হতে এসেছিলেন সুদীপ নাহা। তাঁর পরিজন, বর্ধমানের কালনা গেটের বাসিন্দা রাজু নাহার অভিযোগ, “নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পরে থার্মাল স্ক্রিনিং করা হয়। সেখানে জ্বর বেশি রয়েছে দেখেই ভর্তি নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়।’’ একই অভিযোগ ওই বৃদ্ধার পরিবারেরও।

জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের লেখা চিঠি থেকে জানা যায়, দেড়-দু’মাস ধরে অস্থি-সমস্যায় ভুগছিলেন ওই বৃদ্ধা। শয্যাশায়ী ছিলেন, ‘ট্রাকশন’ নিতে হচ্ছিল। এর মধ্যেই মঙ্গলবার সকালে জ্বর আসে তাঁর। বিভিন্ন পরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানান, মূত্রথলিতে সংক্রামণ হয়েছে বলে জ্বর আসছে। নার্সিংহোমে ভর্তি করালে ভাল হয়। সেই মতো অ্যাম্বুল্যান্স করে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। এই নার্সিংহোমে আগেও ভর্তি ছিলেন ওই বৃদ্ধা। অভিযোগ, ‘কেস হিস্ট্রি’ না দেখে শুধু জ্বর বেশি বলে ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে অন্য নার্সিংহোমটিও তাঁদের ফিরিয়ে দেন। ওই বৃদ্ধার ছেলের দাবি, ‘বারবার অনুরোধ করার পরেও প্রেসক্রিপশন বা চিকিৎসকের পরামর্শ না দেখেই নার্সিংহোমের দরজা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিনা চিকিৎসায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে টানাপড়েন চলে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা মিললে মাকে বাঁচানো যেত।’’

ওই দুই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেন, “এ রকম ঘটনা কেন হল জানি না। ওই সময়ে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’ নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক শেখ আহলাজউদ্দিন বলেন, “প্রশাসনের স্পষ্ট বার্তা রয়েছে কোনও রোগীকে ফেরানো যাবে না। যদি কারও জ্বর হয় তাঁকে আলাদা করে রাখতে হবে। প্রশাসনের এই বার্তা আমাদের সকলের মানা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE