Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

চলছে না যানবাহন, কমেছে দূষণ

পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বাতাসে কার্বন-মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাইঅক্সাইড বা সালফার-ডাইঅক্সাইডের হার নিয়ে দুশ্চিন্তা বহু দিনের।

রাতুড়িয়া অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে ‘লকডাউন’-এর আগে ও পরে।ছবি: বিকাশ মশান

রাতুড়িয়া অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে ‘লকডাউন’-এর আগে ও পরে।ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

‘লকডাউন’-এর জেরে বন্ধ শিল্প-কারখানা। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল একেবারেই কমে গিয়েছে। ফলে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেবে, দূষণের মাত্রা কমেছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে।

পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বাতাসে কার্বন-মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাইঅক্সাইড বা সালফার-ডাইঅক্সাইডের হার নিয়ে দুশ্চিন্তা বহু দিনের। তবে গত কয়েক বছরে বহু শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়েছে বা উৎপাদনের মাত্রা কমেছে। ফলে, বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের মাত্রাও কমেছে পাল্লা দিয়ে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত মাত্রার নীচে নেমে এসেছে এই সব গ্যাসের মাত্রা।

‘লকডাউন’-এর জেরে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ আরও কমেছে বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, আসানসোলের স্বয়ংক্রিয় দূষণ পরিমাপ যন্ত্রের হিসাব অনুযায়ী, ‘লকডাউন’ শুরুর সময় ২২ মার্চ বাতাসে সালফার-ডাইঅক্সাইডের মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ ৩৭.৪৯ মিলিগ্রাম। গত বৃহস্পতিবার তা ছিল ২৭.৩০। একই প্রবণতা দেখা গিয়েছে দুর্গাপুরের বাতাসেও।

পর্যদের ওই আধিকারিক জানান, গত কয়েক বছরে শিল্পাঞ্চলের বাতাসে প্রধান মাথাব্যথার কারণ, বাতাসে ভাসমান বিপজ্জনক ধূলিকণা পিএম ১০-এর (১০ মাইক্রোমিটারের ছোট আকারের ভাসমান ধূলিকণা) মাত্রাতিরিক্ত হার। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে সব সময় তা বেশি থাকে এই এলাকায়। এর মূল কারণ, শহর জুড়ে বছরভর নির্মাণকাজ চলে। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ‘অসম্পূর্ণ’ সার্ভিস রোড ও বহু জায়গায় ভাঙা সার্ভিস রোড দিয়ে শত-শত গাড়ি চলায় ধুলো ওড়ে। সঙ্গে কারখানার ধূলিকণা তো আছেই। কারখানায় আসা-যাওয়া করা শত-শত ট্রাক এবং বাস, গাড়ি, অটো, মোটরবাইক চলাচল প্রভৃতি কারণেও ধূলিকণার হার বাড়ে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘বিপজ্জনক ধূলিকণা বিশেষ করে ফুসফুস ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।’’

পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের জেরে এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ। কারখানা বন্ধ। জাতীয় সড়কে যানবাহন খুব কম চলছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ২২ মার্চ আসানসোলের স্বয়ংক্রিয় দূষণ পরিমাপ যন্ত্রের হিসাব অনুযায়ী, বাতাসে পিএম ১০-এর মাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ১২৫.৮৮। গত বৃহস্পতিবার তা ছিল ৮২.১৫। দুর্গাপুরের বাতাসে এই হার সাধারণত দেড়শোর আশপাশে ঘোরাফেরা করে। এখন তা নেমে এসেছে একশোর আশপাশে।

সব মিলিয়ে আসানসোল-শিল্পাঞ্চলের বাতাসের গুণমান অনেকটাই ভাল হয়েছে বলে মনে করছেন বাসিন্দারাও। তাঁরা জানান, আগে দূষণ থেকে বাঁচতে গরমেও রাতে জানলা খোলা যেত না। এখন দিনভর জানলা খোলা যাচ্ছে। মেঝেয় ধুলো বা কালির স্তর পড়ছে না। রাস্তায় বেরোলে চোখে ঢুকছে না ধুলো। গাছের পাতার রং আর কালচে নয়, সবুজ মনে হচ্ছে। পুকুর বা জলাশয়ের জলের উপরে কার্বনের কালো রঙের স্তর নজরে আসছে না।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রও বলেন, ‘‘কল-কারখানা বন্ধ থাকায় ও যান চলাচল কমায় বাতাসে ভাসমান বিপজ্জনক ধূলিকণার মাত্রা সার্বিক ভাবেই কমেছে। ফলে, বায়ু দূষণও কমেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE