Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

বেলা বাড়তেই ঘুচে গিয়েছে সুরক্ষা বলয়

মুখ্যমন্ত্রী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। রেশন ডিলারেরা জানান, এখন থেকে সারা মাসের রেশনের খাদ্যসামগ্রী এক সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রায় গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে গ্রাহকেরা। দুর্গাপুর বাজারে। ছবি: বিকাশ মশান

প্রায় গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে গ্রাহকেরা। দুর্গাপুর বাজারে। ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৯
Share: Save:

পশ্চিম বর্ধমান রেশনে খাদ্যসামগ্রী বিলি শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি জানান, সরকারি নির্দেশমতো রেশনে এ দিন থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া শুরু হয়েছে। এই বণ্টন ব্যবস্থার তদারক করবেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের সাহায্য করবেন ব্লক ও পুর-কর্তৃপক্ষ।

মুখ্যমন্ত্রী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। রেশন ডিলারেরা জানান, এখন থেকে সারা মাসের রেশনের খাদ্যসামগ্রী এক সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা (১) প্রকল্পের কার্ডে মাথাপিছু সপ্তাহে পাঁচশো গ্রাম করে চাল ও সাড়ে সাতশো গ্রাম করে গম দেওয়া হত। এ দিন সারা মাসের হিসাবে মাথাপিছু ২ কেজি করে চাল ও ৩ কেজি করে গম দেওয়া হয়। তবে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা (২) প্রকল্পে আগের মতোই নির্দিষ্ট মূল্য দিয়ে রেশন নিতে হবে। এই প্রকল্পে ১৩ টাকা কেজি দরে মাথাপিছু এক কেজি চাল ও ৯ টাকা কেজি দরে এক কেজি করে গম দেওয়া হয় গ্রাহকদের।

সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো ও বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্রাহকেরা রেশন পাবেন। তাই খাদ্যসামগ্রী নেওয়ার জন্য এ দিন সকাল ৮টার অনেক আগে থেকেই আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় রেশন দোকানের সামনে গ্রাহকদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘গ্রাহকেরা যেন খাদ্যদ্রব্য পান, সে বিষয়ে প্রত্যেক রেশন দোকানের মালিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ কোথাও কোনও সমস্যার হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি, দাবি তাঁর।

তবে রেশনের কোন কার্ডে কত কেজি করে খাদ্যসামগ্রী বিনামূল্যে মিলবে তা নিয়ে উপভোক্তাদের মধ্যে ধোঁয়াশা থাকায়, এ দিন বিভিন্ন রেশন দোকানে বেশ কিছু গ্রাহককে ক্ষোভ জানাতে দেখা যায়। রেশন দোকানের মালিকেরা কোন কার্ডে, কত খাদ্যসামগ্রী মিলবে সেই তালিকা উল্লেখ করে দেওয়ায় সেই ক্ষোভ সামাল দেওয়া যায়। অঙ্গদপুরের এক গ্রাহক বলেন, ‘‘বিনামূল্যে রেশন পেয়েছি। এক মাসের মাল দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ রূপা রাম নামে দুর্গাপুর স্টেশন বাজারের এক গ্রাহক বলেন, ‘‘আমরা দুঃস্থ। অথচ ৬৬ টাকা দিয়ে তিন কেজি চাল ও তিন কেজি গম নিতে হয়েছে।’’ ডিলারের দাবি, কার্ড অনুযায়ী, সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। সামগ্রী বিলি ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয় বারাবনি ব্লকের কয়েকটি দোকানে। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার (২) উপভোক্তারা দাবি করেন, তাঁদেরও বিনামূল্যে সামগ্রী দিতে হবে। ‘বারাবনি ব্লক রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক চিন্ময় মাজি বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই সকলকে জিনিস দেওয়া হয়েছে।’’

এরই মধ্যে আসানসোল, কুলটির কিছু এলাকায় আটা মেলেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, দু’-এক দিনের মধ্যেই আটার সরবরাহ হয়ে গেলে গ্রাহকেরা তা পাবেন। গম কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পারুলিয়ায়। পরে অবশ্য রেশন ডিলার সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটান।

রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ায় অবশ্য এ দিন রেশনে কোনও সামগ্রী দেওয়া হয়নি। রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত জানান, কবে থেকে রেশন দেওয়া হবে তা জানতে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারণ, অন্য জায়গায় দেওয়া হলে এই দুই এলাকায় রেশন দোকান না খোলায় এক বিরাট অংশের মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বিডিও (রানিগঞ্জ) অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিডিও (জামুড়িয়া) কৃশাণু রায় জানান, প্রয়োজনীয় সামগ্রী না আসায় এ দিন দেওয়া যায়নি। কাল, ৩ এপ্রিল থেকে রেশনে জিনিস দেওয়া হবে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর।

জেলার যে সব জায়গায় রেশন দেওয়া হয়েছে সেখানে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। দূরত্ব বজায় রাখতে কেটে দেওয়া হয় সুরক্ষা বলয়। দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার এভিবি এবিএল সমবায় সমিতির রেশন দোকানে গিয়ে দেখা গেল, সুরক্ষা বলয় ঘুচে গিয়েছে। পুলিশ এসে মাইকে প্রচার করে করে সচেতনতার বার্তা দেয়। আসেন সমবায় সমিতির সদস্যেরাও। পরে ঠিক হয়, কোন এলাকার গ্রাহকদের, কবে রেশন দেওয়া হবে তা সমবায় সমিতির সদস্যেরা মাইকে প্রচার করে পাড়ায়-পাড়ায় জানিয়ে দেবেন।

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যাঁদের কার্ড নেই তাঁদের অস্থায়ী রেশন কার্ড বানিয়ে খাদ্যদ্রব্য দেওয়া হবে। এ দিন এমনই কিছু গ্রাহক এসেছিলেন বলে জেলার রেশন ডিলারেরা জানিয়েছেন। জেলা রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে তপু তিওয়ারি বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে অস্থায়ী কার্ড দেওয়া হলে আমরা উপভোক্তাদের রেশন দেব।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের অস্থায়ী কার্ড বিলির দায়িত্ব দেওয়া হবে পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে। পুরসভা এলাকায় পুর-কর্তৃপক্ষ এই দায়িত্ব পাবেন। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, পুরসভার তরফে অস্থায়ী কার্ড বিলি করার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE