Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্র খুনে আত্মসমর্পণ কাউন্সিলরের

পুকুর থেকে ছাত্রের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন কালনার তৃণমূল কাউন্সিলর সমরজিৎ হালদার। মৃতের পরিবারের তরফে দায়ের করা খুনের অভিযোগে তাঁর নাম ছিল।

সমরজিৎ হালদার। নিজস্ব চিত্র।

সমরজিৎ হালদার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৭:৩৪
Share: Save:

পুকুর থেকে ছাত্রের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন কালনার তৃণমূল কাউন্সিলর সমরজিৎ হালদার। মৃতের পরিবারের তরফে দায়ের করা খুনের অভিযোগে তাঁর নাম ছিল। যদিও আত্মসমপর্ণের পরে সমরজিৎবাবু দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। শনিবার কালনা আদালতে তোলা হলে সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আগেই কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের ছেলে-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় কালনার অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সুহৃৎ দাস। বুধবার সকালে একটি পুকুর থেকে ভেসে ওঠে তার দেহ। মৃতের বাবা পুলিশে অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পুরপ্রধান দেবপ্রসাদবাবুর ছেলে ছিল সুহৃতের সহপাঠী। তার সঙ্গে মোবাইলের একটি এসডি কার্ড নিয়ে ছেলের মনোমালিন্য হয়েছিল। যার জেরেই এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তাঁদের সন্দেহ। তিন জনের নামে অভিযোগ করেন মৃতের বাবা।

দেহ উদ্ধারের পরে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ, ভাঙচুরে শহর অশান্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ পুরপ্রধানের ছেলে-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে। তবে আর এক অভিযুক্ত তথা কালনার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সমরজিৎবাবু পলাতক ছিলেন। তাঁকে গ্রেফতারের দাবি তুলছিলেন মৃতের পরিজন ও প্রতিবেশীরা। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, শুক্রবার কাউন্সিলরকে দলের নেতারা আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ওই রাতেই তিনি কালনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন।

শনিবার তাঁকে পুলিশ লক-আপ থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সমরজিৎবাবু দাবি করেন, তিনি কোনও ভাবেই ঘটনায় জড়িত নন। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে খুনের অভিযোগ করা হয়েছে। দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে পুলিশ আসল সত্য সামনে আনুক বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন কেন, সে প্রশ্নে ধৃত কাউন্সিলর দাবি করেন, পরিস্থিতি কিছুটা দেখে নিতে চাইছিলেন তিনি। তাই প্রথমে আত্মসমর্পণ করেননি।

ঘটনার পরে অভিযোগ ওঠে যে পুকুর থেকে দেহ মিলেছে, তার লাগোয়া ক্লাবে ওই কাউন্সিলরের একটি জেনারেটর রাখার ঘর রয়েছে। সেখানে যাতায়াত ছিল মৃত ছাত্র এবং তার সহপাঠীদের। সেখানে নানা অসামাজিক কাজকর্মও হতো বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। সোমবার সেখানে ভাঙচুরও চালানো হয়। সেখানে যাতায়াত করত এমন কয়েকজনকে পুলিশ জেরাও করে। এ দিন সমরজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমার ঘরে আসা কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।’’

ধৃত কাউন্সিলরের দাদা সুরজিৎ হালদার বলেন, ‘‘ভাই অত্যন্ত ভাল ছেলে। সে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালায়। তার কাছে কোনও খারাপ ছেলে আসত না।’’ তিনি অভিযোগ করেন, সমরজিৎবাবুর সঙ্গে শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা সোমনাথ পণ্ডিতের সম্পর্ক ভাল নয়। তারই জেরে তাঁকে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। সোমনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সে জন্য দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মোমবাতি মিছিলে আমি ছিলাম। গোটা কালনা দোষীদের সাজা চায়। যারা এ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন তারা ঠিক করছেন না।’’

এ দিন শহরে আদালত চত্বর-সহ বেশ কিছু জায়গায় এই ঘটনায় দোষীদের সাজার দাবিতে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। কিন্তু খুনের তদন্তে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। কালনার এসডিপিও ওয়াই রঘুবংশী জানান, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শীঘ্রই কিনারা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

student surrender murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE