ব্যাগবন্দি শিল্পা অগ্রবালের দেহ। ফাইল চিত্র
গত কয়েক বছরে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে এই শহরে। কিন্তু তদন্তে নেমে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘অভিযুক্ত’রা সে ভাবে ‘মার্কামারা’ দুষ্কৃতী নন। পুলিশের খাতায় নামও নেই। দুর্গাপুরে গত কয়েক বছরে এই খুনের মামলাগুলির তদন্ত করতে গিয়ে এ কথায় এখন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্দরে। পুলিশের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শহরে অপরাধমূলক কাজকর্ম ঘটাচ্ছেন কখনও আপাত ভাবে নিরীহ, কখনও বা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কাজ করা ব্যক্তিরা। সমাজের এই অংশের এমন ‘মানসিকতা’য় ভাবাচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
২০১১ সালে কাজ শুরু করে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। সিসি ক্যামেরার সংখ্যা অনেক বেড়েছে শপিং মল, হোটেল বা জনবহুল মোড়ে। বেড়েছে পুলিশকর্মীর সংখ্যা, নজরদারির ব্যবস্থাও। চুরি, ছিনতাইয়ের বেশ কিছু ঘটনায় এমন ‘নজরদারি’র ফলও মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু, বেশ কিছু খুনের ঘটনা সামনে আসতেই ঘুম ছুটেছে পুলিশের।
যেমন, ২০১২-র ২৫ ফেব্রুয়ারি। ভরসন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের উদয়শঙ্কর বীথিতে খুন হন আসানসোল মহিলা থানার তৎকালীন ওসি শম্পা বসুর বাবা, ডিএসপি-র প্রাক্তন কর্মী দিলীপকুমার বসু (৮০)। এই ঘটনার বছর খানেক বাদে মুর্শিদাবাদ থেকে এক জনকে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তি যে এই খুনে জড়িত থাকতে পারেন, তা আগে বোঝা যায়নি। চুরির মামলার জেরা করতে গিয়ে বিষয়টি সামনে আসে।
২০১৫ সাল। এই সময়ে দুর্গাপুরের দু’টি ঘটনা গোটা রাজ্যেও দাগ কাটে। ওই বছর ১৫ জুলাই উদ্ধার হয় বাঁকুড়ার প্রতাপবাগানের বাসিন্দা, ঠিকাদার বিপুল রায়চৌধুরির (৪৬) আধপোড়া দেহ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ওই ঠিকাদারকে দুর্গাপুরে ডেকে এনে খুন করে হাত-পা ভেঙে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট পাঁচ জন ধৃতের তিন জনেরই অপরাধের কোনও অতীত ‘রেকর্ড’ ছিল না বলে জানান পুলিশকর্তারা। এই বছরই ২৯ অগস্ট প্রেমিকা ও তাঁর শিশুকন্যাকে খুনের পরে দেহ টুকরো টুকরো করে স্যুটকেসে ভরে গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েন সমরেশ সরকার। সমরেশ দুর্গাপুরের মামরা বাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার।
২০১৭ সালেও খুনের এই ‘ধারা’ অব্যাহত থাকে। ২৬ মে বেনাচিতির উত্তরপল্লির একটি বাড়ির উঠোন খুঁড়ে উদ্ধার হয় জিনা বেগম (৩০) নামে এক বধূর দেহ। গ্রেফতার করা হয় পেশায় রাজমিস্ত্রি, বীরভূমের নানুরের বাসিন্দা হায়দর শেখ। ওই বছর নভেম্বরে সিটি সেন্টারের অবনীন্দ্র বীথিতে বাড়িতেই খুন হন অবসরপ্রাপ্ত বিমাকর্মী সত্যরঞ্জন খাঁড়া (৭০)। গ্রেফতার করা হয় বাড়ির এক পরিচারিকাকে। এ ছাড়া সম্প্রতি মেজিয়ার তরুণী শিল্পা অগ্রবালকে (২৮) বেনাচিতির ফ্ল্যাটে খুন করে দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মেজিয়ার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রাজীব কুমার ও তাঁর স্ত্রী মনীষা কুমারীকে। মনীষাও ফুলঝোড় শাখার সহকারি ম্যানেজার। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের কেউই পুলিশের খাতায় ‘পরিচিত’ মুখ নন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পড়শিরাও এই অভিযুক্তদের ‘নিরীহ’ বলেই জানতেন।
এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর একাংশের আশঙ্কা, পরের ‘খুন’ কোথায়! কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘এগুলি, ‘প্রফেশনাল ক্রাইম’ নয়। এই ধরনের অপরাধ রুখতে নানা প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy