বন্ধ কারখানা নতুন করে খোলার উদ্যোগের তালিকায় রয়েছে দুর্গাপুরের হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচএফসিএল)। কিন্তু এই পরিস্থিতিততে দুর্গাপুরের এই বন্ধ কারখানার কাছে বকেয়া চেয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। কারখানা ও শহরের স্বার্থে সেই বকেয়া মকুবের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন বলে জানালেন দুর্গাপুর পূর্বের সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়।
১৯৬৫-তে এই কারখানার শিলান্যাস করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৭৪-এ শুরু হয় ইউরিয়া উৎপাদন। কাঁচামাল হিসেবে ন্যাপথা ব্যবহার করে ইউরিয়া উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ায় নয়ের দশকের শুরু থেকে কারখানা রুগ্ণ হতে থাকে। ১৯৯৮-এ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরে কারখানাটি চলে যায় ‘বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিআইএফআর)-এর হাতে। ২০০৩-এ প্রায় ১১২৫ জন শ্রমিক-কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেন।
এর পরে দেশে সারের ঘাটতি মেটাতে ২০০৭-র এপ্রিলে দেশের মোট আটটি বন্ধ সার কারখানাগুলি নতুন করে চালুর পরিকল্পনা নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১১-র ৪ অগস্ট ক্যাবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স সার কারখানাগুলির পুনরুজ্জীবনে সায় দেয়। ওই আটটি কারখানার তিনটি সরকারি উদ্যোগে খোলার প্রক্রিয়া চলছে। দুর্গাপুর-সহ বাকি কারখানাগুলি বেসরকারি উদ্যোগে খোলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এডিডিএ-র বকেয়া মেটানোর দাবি দুর্গাপুরে কারখানা খোলার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি সন্তোষবাবুর। তিনি জানান, ২০১২-র ৩০ ডিসেম্বর বিআইএফআরের শুনানিতে ১৯৯ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা বকেয়া দাবি করে এডিডিএ। বিআইএফআর ২০১৩ সালে চার বার ও ২০১৪-য় একবার চিঠি দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বকেয়া বিষয়গুলির সম্মানজনক মীমাংসার প্রস্তাব দেয় রাজ্য সরকারকে। সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘কিন্তু এডিডিএ-র তরফে কোনও ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ জমা দেওয়া হয়নি। উল্টে ২০১৭-র ২৮ এপ্রিল এডিডিএ ৫২৫ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বকেয়া দাবি করে।’’
বিধায়কের আরও অভিযোগ, পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্তের পরে ২০১২-য় দুর্গাপুর সার কারখানার সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭০৬ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা। অথচ সেই সম্পত্তি মাত্র ৭০ কোটি টাকায় ‘স্ক্র্যাপ’ হিসেবে বিক্রির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সার কারখানার টাউনশিপের বেহাল পরিষেবা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সরব হয়েছেন বলে জানান বিধায়ক। সন্তোষবাবুর ক্ষোভ, ‘‘অন্য রাজ্যের বন্ধ সার কারখানা পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে স্বার্থত্যাগের পথ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি। অথচ আমাদের এখানে উল্টে কয়েকশো কোটি টাকা বকেয়া দাবি করা হচ্ছে। এর ফলে কারখানার ভবিষ্যৎ সংশয়ের মুখে পড়ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছি।’’
এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ তবে সিপিএম বিধায়কের এই চিঠির বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের জেলা কার্য়করী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গাপুরের সার কারখানা খোলার বিষয়ে গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। অথচ, সে প্রসঙ্গে বিধায়ক কিছু বলেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy