Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জল-সঙ্কটে দায়ী ‘চুরি’, চিহ্নিত কর্মী

সর্ষের মধ্যেই ভূত। জল ‘চুরি’ ঠেকাতে অভিযানের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা হতেই এই প্রবাদটি কতখানি সত্যি, তা ঠারেঠারে বোঝা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল পুরসভার কর্তারা। তাঁদের দাবি, জল-চুরির সঙ্গে এক শ্রেণির নাগরিক ও রাজনৈতিক ভাবে এলাকায় প্রভাবশালীরা যেমন জড়িত, তেমনই পুরসভার কয়েক জন কর্মীও জড়িত এই চুরি-চক্রের সঙ্গে।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

সর্ষের মধ্যেই ভূত। জল ‘চুরি’ ঠেকাতে অভিযানের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা হতেই এই প্রবাদটি কতখানি সত্যি, তা ঠারেঠারে বোঝা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল পুরসভার কর্তারা। তাঁদের দাবি, জল-চুরির সঙ্গে এক শ্রেণির নাগরিক ও রাজনৈতিক ভাবে এলাকায় প্রভাবশালীরা যেমন জড়িত, তেমনই পুরসভার কয়েক জন কর্মীও জড়িত এই চুরি-চক্রের সঙ্গে।

আসানসোল পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুকোমল মণ্ডল জানান, পুরসভা এলাকায় ফি দিন আট কোটি লিটার জল দরকার। পুরসভা ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলপ্রকল্পগুলি থেকে বর্তমানে এই পরিমাণ জলই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তার পরেও পুরসভার ১০৬ ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক পানীয় জলের সঙ্কট। কেন এমনটা খোঁজ নিতে গিয়েই জলচুরির বিষয়টি সামনে আসে।

কী ভাবে চলছে জল চুরি? মূলত চারটি বিষয় সামনে এসেছে। প্রথমত, মূল পাইপলাইন ফাটিয়ে অবৈধ ভাবে জলের সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পুরসভার মেয়র পারিষদ (জল) পূর্ণশশী রায় জানান, পুরসভারই কয়েক জন অসাধু কর্মী টাকা নিয়ে পুরসভার জাল কাগজপত্র বানিয়ে চালু পাইপলাইন থেকে রাতারতি অবৈধ সংযোগ জুড়ে দিচ্ছেন। তৃতীয়ত, পুরসভারই কিছু কর্মী জলভর্তি ট্যাঙ্কার এলাকায় সরবরাহের কথা বলে আসলে এলাকার ছোটখাটো কারখানায় ট্যাঙ্কার ঢোকাচ্ছেন। পরিবর্তে মোটা টাকার বিনিময় চলছে। অবৈধ জলের সংযোগ মূলত নিচ্ছে এলাকার ছোট কারখানা, ইটভাটা, হোটেল ও রেস্তরাঁ। চতুর্থত, এই পুরো চুরি-চক্রে এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নামও সামনে এসেছে।

তবে এই চুরি রুখতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে পুরসভার কর্তারা জানান। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অবৈধ উপায়ে জলের সংযোগ জুড়ে দেওয়া ও কারখানায় জলের ট্যাঙ্কার পৌঁছে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক মাসে পুরসভার চার জন কর্মীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে। সাঁকতোড়িয়ায় একটি মদ তৈরির কারখানায় অবৈধ জলের সংযোগ নেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি দু’জনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়। ওই দু’জনকে জেরা করে এলাকার প্রভাবশালী কয়েক জন নেতার নামও সামনে আসে।

যদিও বিষয়টি নিয়ে মেয়র পারিষদ (জল) পূর্ণশশী রায় বলেন, ‘‘পুরসভা এলাকায় সমস্ত নাগরিকদের জল পৌঁছে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই জল চুরিতে শাসক বা বিরোধী দলের যেইই জড়িত থাকুন না কেন, প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সুকোমলবাবুও জানান, চুরিতে জড়িত সন্দেহে পুরসভার কর্মী-সহ বেশ কয়েক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘এই চুরি ঠেকাতে পুরসভা দ্রুত অভিযানেও নামবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Crisis Asansol Municipal Corporation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE