Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙা পড়ে সজনীকান্তের জন্মভিটে

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কবির জন্মভিটে। ছাদ ভেঙে পড়েছে। দেওয়ালের বেশির ভাগটাই ভাঙা, আগাছায় ভরা। তার মাঝেই ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু, ছাগল। গলসি ১ ব্লকের বেতালবন গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিংশ শতকের গোড়ার দিকের অন্যতম সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাসের ভিটের হাল এমনই। প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও সংস্কারের কোনও উদ্যোগ করা হয়নি বলেও তাঁদের দাবি।

গলসির বেতালবনে এমনই অবস্থা বাড়িটির। নিজস্ব চিত্র

গলসির বেতালবনে এমনই অবস্থা বাড়িটির। নিজস্ব চিত্র

কাজল মির্জা
গলসি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share: Save:

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কবির জন্মভিটে। ছাদ ভেঙে পড়েছে। দেওয়ালের বেশির ভাগটাই ভাঙা, আগাছায় ভরা। তার মাঝেই ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু, ছাগল। গলসি ১ ব্লকের বেতালবন গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিংশ শতকের গোড়ার দিকের অন্যতম সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাসের ভিটের হাল এমনই। প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও সংস্কারের কোনও উদ্যোগ করা হয়নি বলেও তাঁদের দাবি।

১৯০০ সালের ২৫ অগস্ট গলসি বাজার থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মেছিলেন কবি (যদিও তাঁর জন্মের দিনক্ষণ নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। কারও কারও মতে কবির জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯)। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বীরভূমের রায়পুর গ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে দেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছিলেন কবি। ১৯১৮ সালে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন তিনি। ১৯২০ সালে বাঁকুড়া মিশনারি কলেজ থেকে আইএসসি এবং কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯২২ সালে বিএসসি পাশ করেন। এমএসসি পড়ার সময় যুক্ত হন ‘শনিবারের চিঠি’র সঙ্গে।

সজনীকান্তের এক আত্মীয় তথা গৃহশিক্ষক ওঙ্কার দত্ত বলেন, “আমার বাবা শিবু দত্তের মুখে শুনেছিলাম, সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় সজনীকান্তের অবাধ বিচরণ ছিল। কবি, সমালোচক, গবেষক ও সাময়িক পত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি পরিচিত। ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তীব্র অথচ হাস্যরসাত্মক সমালোচনার মাধ্যমে সমকালীন সাহিত্যে অন্য রসের সঞ্চার ঘটিয়েছিলেন তিনি। আধুনিক সাহিত্যিকেরা তো বটেই তাঁর হাত থেকে নিস্তার পাননি রবীন্দ্রনাথও।’’ ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত সজনীকান্ত দাসের লেখা ‘বাঙ্গালা গদ্যের প্রথম যুগ’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের একটা জরুরি অঙ্গ। শনিবারের চিঠি ছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন তিনি। যুক্ত ছিলেন বেশ কিছু প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গেও। কবিতা, গল্প, সমালোচনা মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের বেশি। ১৯৬২ সালে মারা যান এই কবি।

গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেতালবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ভাঙাচোরা বাড়িটার কিছু অংশ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির দেওয়ালে ঘুঁটের প্রলেপ। পুরোটাই ভরে গিয়েছে জংলি গাছে। এলাকার প্রবীণদের দাবি, কবির স্মৃতি বলতে ওই ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িটা, আর লোয়াপুর থেকে বড়চাতরা যাওয়ার রাস্তা। কবিরা নামানুসারে ওই রাস্তার নাম হয়েছে সজনীকান্ত সরণি। গ্রামবাসী সুশান্ত সাহা, সফিউল খলিফারা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কবির জন্ম ভিটে সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু প্রশাসন কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।” বেতালবন প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবীর মণ্ডল বলেন, “এলাকার গর্ব ওই বাড়ি দ্রুত সংস্কার হওয়া দরকার।’’

গলসি ১-এর বিডিও বিনয়কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব। এলাকার মানুষ আবেদন জানালে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE