Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাসে হুড়োহুড়ি, অফিসে গা-ছাড়া

রাস্তায় বাস কমতে থাকায় পূর্বাভাস মিলেছিল আগের দিনই। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে বেশির ভাগ বড় বাস কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেওয়ায় সেই যাত্রী দুর্ভোগের ছবিই দেখা গেল আসানসোল-দুর্গাপুরে। অফিস-কাছারিও ছিল সুনসান। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই পরিস্থিতি হতে পারে আঁচ করে আগেই ক্ষমা চেয়েছিলেন।

উপরে, আসানসোল কোর্ট মোড়ে বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। নীচে বাঁ দিকে, লোকজন কম দুর্গাপুর আদালতে। ডান দিকে, কুলটিতে অটোয় ভিড়।

উপরে, আসানসোল কোর্ট মোড়ে বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। নীচে বাঁ দিকে, লোকজন কম দুর্গাপুর আদালতে। ডান দিকে, কুলটিতে অটোয় ভিড়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

রাস্তায় বাস কমতে থাকায় পূর্বাভাস মিলেছিল আগের দিনই। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে বেশির ভাগ বড় বাস কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেওয়ায় সেই যাত্রী দুর্ভোগের ছবিই দেখা গেল আসানসোল-দুর্গাপুরে। অফিস-কাছারিও ছিল সুনসান। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই পরিস্থিতি হতে পারে আঁচ করে আগেই ক্ষমা চেয়েছিলেন।

লম্বা লাইন স্ট্যান্ডে

সকাল ১০টা থেকেই দুই শহরের নানা বাসস্ট্যান্ডে ছিল লম্বা লাইন। সময়ের সঙ্গে তা বেড়েছে। আসানসোলের বিএনআর বাসস্ট্যান্ড, কোর্ট মোড় বা দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার স্ট্যান্ড, সর্বত্রই নিত্যযাত্রী ও পড়ুয়ারা ছিল বাসের অপেক্ষায়। আসানসোলের কোর্ট মোড়ের যাত্রীরা জানান, মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বাস মেলে অন্য দিন। এ দিন অন্তত ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। একটি মিনিবাস আসতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে বাঁকুড়ার দেজুড়ি যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন কুণালকান্তি দাস। বহুক্ষণ অপেক্ষার পরে একটি বাস এলেও সেটির কর্মী জানিয়ে দিলেন, দেজুড়িতে বাস দাঁড়াবে না। মাথায় হাত কুণালবাবুর। পরে স্ট্যান্ডের অনুসন্ধান অফিসের কর্মীদের হস্তক্ষেপে দেজুড়িতে বাস থামাতে সম্মত হন বাসকর্মী।

সকাল ১০টা নাগাদ বরাকর বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লার বাস ধরতে এসে না পেয়ে ফিরে গেলেন জনা কয়েক যাত্রী। ঝাড়খণ্ডের চিরকুণ্ডা থেকেও অনেকে এসেছিলেন। কিন্তু স্ট্যান্ডে এসে জানলেন, বহু বাস পুরুলিয়ায় চলে গিয়েছে সমাবেশে যাবার জন্য। আসানসোল স্টেশন চত্বরে বাস ধরার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা সাবিনা খাতুন জানান, সকাল ১০টায় ট্রেন থেকে নেমেছেন। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষায় থেকেও বাস মেলেনি।

ভরসা অটো

বড় বাসের দেখা নেই। রাস্তায় মিনিবাসও তুলনায় কম। আসানসোলে তাই অটো দেখতে পেলেই যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল হুড়োহুড়ি। সকাল ১১টা নাগাদ কুলটির নিয়ামতপুরে রাস্তার পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিলেন যাত্রীরা। অনেকেই যাবেন রূপনারায়ণপুর, দেন্দুয়া, চিত্তরঞ্জনের কর্মস্থলে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে একটি অটো আসায় গাদাগাদি করে তাতেই চেপে বসলেন অনেক। সেখানে জায়গা পেতে খানিক ধস্তাধস্তিও চলল। দুর্গাপুরে অবশ্য অটো-চিত্র ছিল খানিকটা অন্য রকম। এই শহরে অটোর সংখ্যা যথেষ্ট। বাস না থাকার ফায়দা তুলতে সকাল থেকেই স্ট্যান্ডে হাজির ছিল অনেক অটো। কিন্তু মিনিবাস চলায় শহরের মধ্যে যাতায়াতকারীদের বিশেষ সমস্যা হয়নি। আবার বড় বাস না আসায় শহরের গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য বাইরে থেকে আসা যাত্রী পায়নি অটো। তাই যতটা লাভের আশা করেছিলেন অটো চালকেরা, বাস্তবে তার ধারেকাছে যায়নি। এক অটো চালকের বক্তব্য, ‘‘দিনের শেষে যদি কেউ ‘রিজার্ভ’ করেন তাহলে পুষিয়ে যাবে।’’

সুনসান কাছারি

কোনও কাজে গেলে ভিড় কাটিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোই সমস্যার, দুর্গাপুর আদালতে প্রতিদিন এটাই ছবি। কিন্তু বৃহস্পতিবার তা একেবারে পাল্টে গেল। লোকজন অনেক কম। বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসঘর সুনসান। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আইনজীবীদের অনেকেই আজ সমাবেশে গিয়েছেন। পাণ্ডবেশ্বর থেকে এসেছিলেন শ্রীমন্ত সাধু। তিনি বলেন, ‘‘জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে এফিডেভিট করার দরকার ছিল। লোকজন নেই। প্রায় সারা দিন লেগে গেল।’’ আদালত চত্বরের সামনে হোটেল কার্তিক পালের। তিনি বললেন, ‘‘আজ ভিড় নেই। তাই খদ্দের কম।’’ সিটি সেন্টারের রেশন অফিসে সিঁড়ি ধরে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত লম্বা লাইন নানা কাজে আসা গ্রাহকদের। তাঁদেরই জনা কয়েকের কথায়, ‘‘এমনিতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আজ তো আবার ২১ জুলাই!’’ উপরে গিয়ে দেখা গেল, কর্মীদের বেশ কয়েকটি চেয়ার ফাঁকা। এক কর্মী জানান, পদ ফাঁকা আছে বলেই এই সমস্যা। সকাল ১১টা নাগাদ আসানসোলের পরিবহণ কার্যালয়ে গিয়েও দেখা যায়, একেবারে সুনসান। শহরের বেশ কিছু স্কুলে এ দিন মিড-ডে মিল রান্না হয়নি। রান্নার কর্মীদের অনেকে সমাবেশে যাওয়াই এর কারণ বলে অভিযোগ। তবে মহকুমাশাসকের দফতর বা পুরসভায় স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।

উল্টো ছবি

দুপুরে আসানসোলের ঊষাগ্রামে জিটি রোডে দাঁড়িয়ে ছিল রানিগঞ্জগামী একটি মিনিবাস। একেবারে ফাঁকা। বাসের কর্মী প্রকাশ দুবে জানান, যাত্রী মিলছে না। কারণ কী? তাঁর মতে, ‘‘নিত্যযাত্রীরা সকালে কোনও না কোনও ভাবে গন্তব্যে চলে গিয়েছেন। এ ছাড়া অনেক বাস সমাবেশে চলে গিয়েছে বলে খবর থাকায় সাধারণ মানুষজন ভোগান্তির আশঙ্কায় বিশেষ বাইরে বেরোননি। তাই বেলা বাড়তেই রাস্তা ফাঁকা, যাত্রীও কম।’’ বৃহস্পতিবার আসানসোল বাজার বন্ধ। সে জন্যও শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল।

ছবি: শৈলেন সরকার, বিশ্বনাথ মশান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

21st july crowd people
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE