Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

ধান নিয়ে চিন্তা ঘূর্ণিঝড়ে

ঝড় আসার আগে ফসল ঘরে তোলার মরিয়া চেষ্টা। মঙ্গলবার গলসির ভারিচা গ্রামে। ছবি: কাজল মির্জা

ঝড় আসার আগে ফসল ঘরে তোলার মরিয়া চেষ্টা। মঙ্গলবার গলসির ভারিচা গ্রামে। ছবি: কাজল মির্জা

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৬:৩৪
Share: Save:

এপ্রিলের শেষ দিকে ধান কাটা শুরুর সময় থেকে মাঝে-মধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। জমি ভিজে থাকায় অনেক সময়ে যন্ত্র (কম্বাইন্ড হারভেস্টর) নামিয়ে ধান কাটতেও সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। আবার ‘লকডাউন’ চলায় পর্যাপ্ত শ্রমিক না মেলায় সব ধান কেটে ঘরেও তুলতে পারেননি অনেক চাষি। পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি দফতরের হিসাব অনুযায়ী, এখনও জেলায় ৩২ শতাংশ ধান মাঠেই পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। আজ, বুধবার দুপুরের মধ্যে ধান কেটে গোলায় তুলতে না পারলে, ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে কৃষি-কর্তারা জানান। চাষিদের একাংশের দাবি, খুব কম বড় চাষিই নিজে বোরো ধান চাষ করেন। মূলত প্রান্তিক চাষি বা খেতমজুরেরাই এই চাষ করেন। ধান কাটা হলেও গুদামে রাখা নিয়ে ওই চাষিরা চিন্তিত।

জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা নেই। তবে বৃষ্টিপাত হবে। সে জন্য বুধবার দুপুরের মধ্যে ধান কেটে গুদামে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতি হলে, ছবি-সহ সরাসরি বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’’ কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২৪ এপ্রিল থেকে জেলায় নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। দু’বার ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ও হয়েছে। তাতে জেলায় ১,৬৪,২০৫ হেক্টরের মধ্যে প্রায় ৪৯ হাজার হেক্টর জমির ধানে ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৪,৮৯২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান সদর মহকুমার ১৩টি ব্লকে ৯৭,৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশে ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। ৬০ শতাংশের বেশি জমির ধান চাষিরা ঘরে তুলে ফেলেছেন। তবে মেমারি ১ ও ২, গলসির ১ ও ২ এবং ভাতার ব্লকের বড় অংশে এখনও ধান কাটা হয়নি। ভাতারের পাটনা গ্রামের চাষি সরিফুল বাশারের দাবি, “কুড়ি বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ছ’সাত বিঘার ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। বাকি ধান তুলতে না পারলে বড় ক্ষতির মুখে পড়ব।’’ বর্ধমান লাগোয়া কুমরুন গ্রামের চাষি শম্ভুনাথ মল্লিকের কথায়, “অর্ধেক ধান ঘরে তুলতে পারিনি। বৃষ্টির জন্য যন্ত্র নামাতেই পারিনি। একদম শেষ সময়ে ফসল না তুলতে পারলে কী যে হবে!” প্রায় একই সুর শোনা যায় গলসির আদড়াহাটির চাষি ভৌরব রুইদাস, শিড়রাই গ্রামের শেখ সাবলুদের গলায়। তাঁরা বলেন, “শ্রমিক পাওয়া যায়নি। যন্ত্র পেলেও জমি ভিজে থাকায় নামাতে পারিনি।’’

কৃষি দফতরের এক আধিকারিক সুপ্রিয় ঘটক বলেন, “ধান কেটে জমিতে রাখা না থাকলে, ক্ষতির আশঙ্কা কম। বৃষ্টি ধান গাছের ক্ষতি করতে পারবে না।’’ কৃষি দফতর অবশ্য জানায়, জেলার প্রায় চার লক্ষ এক হাজার কৃষকের বোরোয় শস্যবিমা করানো আছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতি হলেও, তাঁরা ঠিক সময়ে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণ পেতে অসুবিধা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Crops Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE