Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কৃষ্ণসায়রে ভেসে উঠল মরা মাছ

দিঘির জলে ভেসে রয়েছে মরা রুই, কাতলা, মৃগেল। পাড় দিয়ে গেলেই নাকে আসছে দুর্গন্ধ। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণসায়রের পাশ দিয়ে প্রাতঃভ্রমণে যাওয়া লোকজনের দাবি, গত এক মাসে দফায় দফায় মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখেছেন তাঁরা।

ভাসছে মরা মাছ। নিজস্ব চিত্র

ভাসছে মরা মাছ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

দিঘির জলে ভেসে রয়েছে মরা রুই, কাতলা, মৃগেল। পাড় দিয়ে গেলেই নাকে আসছে দুর্গন্ধ। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণসায়রের পাশ দিয়ে প্রাতঃভ্রমণে যাওয়া লোকজনের দাবি, গত এক মাসে দফায় দফায় মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখেছেন তাঁরা। এ সপ্তাহে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত কয়েকশো মাছ ভেসে উঠেছে বলেও তাঁদের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কোনও ভাবে দূষিত গ্যাস তৈরি হয়েছে ওই জলে। তার জেরেই মাছ মারা যাচ্ছে।

বর্ধমান রাজ পরিবারের উত্তরপুরুষ কৃষ্ণরাম রাই ১৬৯০ থেকে ১৬৯৫ সালের মধ্যে কৃষ্ণসায়র তৈরি করান। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৬.৬ একর জায়গায় পার্ক-সহ কৃষ্ণসায়র রয়েছে। যার মধ্যে ৩৩ একর জলাশয়। ওই পার্কে নিয়মিত আসেন এমন তরুণ-তরুণীদের কথায়, “মরা মাছ জলেই পচে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে পার্কে বসা দায় হয়ে পড়ছে।’’ পরিবেশবিদদের দাবি, কৃষ্ণসায়রে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে। পচে যাওয়া মাছের জন্য জল দূষিত হয়ে পড়লে পরিযায়ীরাও আসতে চাইবে না। এমনকি, এলেও তারাও দূষণে আক্রান্ত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণসায়রে মাছ মরে যাওয়া নিয়ে ঘনিষ্ট মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য নিমাই সাহা। বুধবার দুপুরে কৃষ্ণসায়র পার্কের দায়িত্বে থাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার পার্থনারায়ণ ঘোষের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যের মৎস্য দফতরের কর্তাকে নিয়ে কৃষ্ণসায়র পরিদর্শন করে ওই রিপোর্ট দেওয়ার জন্য উপাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও স্তরেরই প্রশাসনিক আধিকারিক প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থা কৃষ্ণসায়রে মাছ চাষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিল। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওই সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলা চলছিল। তার জেরে প্রায় চার বছর দিঘি সংস্কার করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, সম্প্রতি মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় দিঘির পানা পরিষ্কারের বরাত দেওয়া হয়েছিল। বরাত পাওয়া সংস্থা কচুরিপানা না তুলেই জলে কীটনাশক দেয়। তখনই বেশ কিছু মাছ মারা যায়। পরে কর্তৃপক্ষ ওই সংস্থার বরাত বাতিল করে দিয়ে নিজেরাই লোক লাগিয়ে পানা পরিষ্কার করান। অভিযোগ, তারপর থেকেই দফায় দফায় মরা মাছ ভেসে উঠছে।

জেলা মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা দেবাশিস পালুইয়ের দাবি, “দীর্ঘ দিন দিঘিটি সংস্কার হয়নি। পানা পরিষ্কার করতেই নানা রকম গ্যাস তৈরি হয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই মাছগুলি মারা যাচ্ছে।’’ তাঁর পরামর্শ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত দিঘি থেকে দ্রুত মাছগুলি তুলে নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পুকুরের পাঁক শোধন করা। দেরি করলে আরও মাছ মরে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish Krishnasayar Park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE