Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বাড়িতেই প্রসব
Road

পথ ‘বেহাল’, পাড়ায় ঢুকল না অ্যাম্বুল্যান্স

প্রসূতিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও দুর্ভোগ সঙ্গী করেই যেতে হয় রাজবাঁধের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। কারণ, রাস্তার কারণে এখানে কোনও স্বাস্থ্যকর্মী আসতে চান না বলে অভিযোগ সাথীদেবীর।

বাঁ দিকে , স্ট্রেচারে শুইয়ে এ ভাবেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মা ও সদ্যোজাতকে।ডান দিকে , এলাকার রাস্তার পরিস্থিতি। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিকে , স্ট্রেচারে শুইয়ে এ ভাবেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মা ও সদ্যোজাতকে।ডান দিকে , এলাকার রাস্তার পরিস্থিতি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকসা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০১:৩৬
Share: Save:

রাস্তাঘাটের কারণে সোমবার রাতে এলাকায় আসতে চায়নি কোনও অ্যাম্বুল্যান্স ও গাড়ি। শেষ পর্যন্ত বাড়িতেই সন্তানের জন্ম দিলেন মা। পরে, মঙ্গলবার ভোরে পাড়ার চার যুবক মা ও সদ্যোজাতকে স্ট্রেচারে শুইয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলেন। অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়ার সেই ভিডিয়ো (সত্যাসত্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার রাজবাঁধা লাগোয়া কলেজপাড়ার এই ঘটনা সামনে আসতেই ‘অনুন্নয়নের’ অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

সোমবার রাতে কী ঘটেছিল? স্থানীয় বাসিন্দা ভানু সরকার জানান, সোমবার রাত ১০টায় প্রসব যন্ত্রণা ওঠে তাঁর পুত্রবধূ, বছর ২৬-এর রজনীদেবীর। রাতভর দফায়-দফায় অ্যাম্বুল্যান্স, বিভিন্ন গাড়ির চালককে ফোন করেন পরিজনেরা। কিন্তু এলাকার নাম শুনে সকলেই বলেন, ‘ওই রাস্তায় যেতে পারব না’। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ভোর ৬টায় বাড়িতেই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন রজনী সরকার নামে ওই প্রসূতি। তার পরে স্থানীয় যুবক মিঠুন মণ্ডল, রিপন মণ্ডল, হিমাংশু মণ্ডল ও মিঠুন মিস্ত্রিরা স্ট্রেচারে করে রজনীদেবী ও তাঁর সন্তানকে পাড়া থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে গিয়ে তোলেন।

কিন্তু এ ভাবে প্রসবের ফলে প্রসূতির স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। রজনীদেবীর শাশুড়ি ভানুদেবী, স্বামী দিলীপবাবুরা বলেন, ‘‘ঘরে প্রসবের সময় খুবই ভয় লাগছিল। প্রসব হয়ে গেলেও নাড়ি কাটার ঝুঁকি নিইনি আমরা।’’ শেষ পর্যন্ত রজনীদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের পানাগড়ের কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসকেরা জানান, মা ও সন্তান, দু’জনেই সুস্থ। এই ঘটনার পরে বুধবার এলাকাবাসীর একাংশ বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের কাছে পথঘাটের উন্নয়নের দাবিতে স্মারকলিপি দেন।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাজবাঁধের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে ভাঙাচোরা মোরাম রাস্তা। এই রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার কোনও রকমে চলাচল করা গেলও, বাকি রাস্তায় মোটরবাইক, সাইকেল ছাড়া, আর কিছুই ঢুকতে পারে না। ওই রাস্তা দিয়েই পানাগড় ব্রাঞ্চ ক্যানাল ও দুর্গাপুর ব্রাঞ্চ ক্যানাল পাড় ধরে পৌঁছতে হয় কলেজপাড়ায়।

সেখানে এই মুহূর্তে রয়েছে ১৩০টি পরিবার। বেশির ভাগই দিনমজুরি বা চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দা তথা ‘সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন গোঁসাইয়ের ক্ষোভ, ‘‘দীর্ঘ কয়েক দশক আমরা এখানে রয়েছি। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার দূরের রাজবাঁধে যেতে হয়। দু’কিলোমিটার দূরে ঝকঝকে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। কিন্তু এখানে কোনও রাস্তা না থাকায় এমন ঘটনার মধ্যে প্রায়ই পড়ি আমরা। বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি।’’

এই পথ-যন্ত্রণার কারণে এলাকায় উন্নয়নও সে ভাবে হয়নি বলে অভিযোগ পেশায় বাসিন্দাদের একাংশের। স্থানীয় বাসিন্দা সাথী মণ্ডল জানান, প্রতিদিন শিশুদের রাজবাঁধে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটা খুবই সমস্যার। প্রসূতিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও দুর্ভোগ সঙ্গী করেই যেতে হয় রাজবাঁধের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। কারণ, রাস্তার কারণে এখানে কোনও স্বাস্থ্যকর্মী আসতে চান না বলে অভিযোগ সাথীদেবীর।

সমস্যা খতিয়ে দেখার কথা জানান জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি। বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাস্তাটির বিষয়ে ও কী ঘটেছে খোঁজ নেব। এলাকায় গিয়ে সমস্যা খতিয়ে দেখব।’’ স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত আমলাজোড়া পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান চয়নিকা পাল বলেন, ‘‘সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট জায়গায় রাস্তার জন্য তদ্বির করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Delivery Home Kanksa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE