Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দোরে পুজো, তবু নিঝুম তাঁতিপাড়া

অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে দশমীতে সিঁদুরখেলা, একসময় তাঁতের শাড়ি ছাড়া ভাবতেই পারতেন না বাঙালি মেয়ে-বউরা। জরি পাড় থেকে জামদানি, ধনেখালি, এক একটা অনুষ্ঠানে শাড়ির চাহিদা ছিল আলাদা।

সুদিনের আশায়। পূর্বস্থলীতে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

সুদিনের আশায়। পূর্বস্থলীতে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৪০
Share: Save:

অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে দশমীতে সিঁদুরখেলা, একসময় তাঁতের শাড়ি ছাড়া ভাবতেই পারতেন না বাঙালি মেয়ে-বউরা। জরি পাড় থেকে জামদানি, ধনেখালি, এক একটা অনুষ্ঠানে শাড়ির চাহিদা ছিল আলাদা। সেই চাহিদা মেটাতে পুজোর মাস তিনেক আগে থেকে রাতভর খটাখট শব্দে জাগত তাঁতিপাড়াও। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে পাওয়ার লুমের সস্তায় বাহারি সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চেনা নকশার ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির চাহিদা কমছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

এ মহকুমায় তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন প্রায় তিন লক্ষ মানুষ। একসময় পূর্ববঙ্গ থেকে এসে সমুদ্রগড়, নসরৎপুর, শ্রীরামপুরের মতো এলাকায় ঘর বেঁধেছিলেন তাঁরা। চাষবাসের পরেই মূল পেশা ছিল তাঁত বোনা। তাঁতিদের দাবি, সারা বছর ব্যবসায় ওঠাপড়া থাকলেও পুজোর মরসুম সব পুষিয়ে দিত। এক দশক আগেও পুজোর মাস চারেক আগে থেকে নকশা দেখিয়ে হাজারে হাজারে শাড়ির বরাত দিতেন কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুরের ব্যবসায়ীরা। অনেকে আগাম টাকাও দিয়ে দিতেন। তাঁতশিল্পীরাও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক ভাড়া করে এনে শুরু করে দিতেন কাজ। তারপরেও নির্দিষ্ট সময়ে হাতে বোনা টাঙাইল, বালুচরি, তসর, ডবল পাড়ের শাড়ির জোগান দেওয়া যেত না। আর এখন একশোটা শাড়ির বরাত পেতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন তাঁরা।

মধ্য শ্রীরামপুরের ফরিদপুর এলাকার তাঁত ব্যবসায়ী বাসুদেব বসাক বলেন, ‘‘এ বার হাতে তৈরি তাঁতের শাড়ির বাজার অত্যন্ত খারাপ। কোনও দোকানে ১০০টা শাড়ি দিয়ে এলে অর্ধেক পছন্দ করে বাকি ফেরত দিয়ে দিচ্ছে দোকানদার। অথচ বছর দশেক আগেও পুজোর শাড়ির জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যেত।’’ পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দীর্ঘদিনের তাঁত ব্যবসায়ী সুশীল বসাকও বলেন, ‘‘এক সময় বাড়ির উঠোনে বেশ কিছু তাঁত ছিল। চাহিদা কমে যাওয়াই তাঁতগুলি তুলে দিয়েছি। এখন বিভিন্ন এলাকার তাঁতিদের শাড়ি কিনে ব্যবসা করি।’’ এমন চললে ব্যবসা টিঁকবে কী ভাবে তা নিয়েও চিন্তায় তিনি। যাঁরা সুতো কাটেন, সুতোয় রঙ করেন পেট চালাতে অন্য পথের কথা ভাবছেন তাঁরাও।

তাঁতিরাই জানান, পাওয়ারলুমে যেখানে দিনে দু’টি শাড়ি বোনা যায়, সেখানে হস্তচালিত তাঁতে একটা শাড়ি বুনতে দু’দিন লাগে। ফলে, মজুরি বেশি পড়ে। তা ছাড়া নকশাতেও বেশি বৈচিত্র্য থাকে না। তার উপরে এ বার বাংলাদেশি হ্যান্ডলুমে বাজার ছেয়ে গিয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। সব মিলিয়ে গাঁটবন্দি শাড়ি ঘরেই পড়ে রয়েছে।

সমুদ্রগড়ে রয়েছে গনেশচন্দ্র তাঁত কাপড় হাট। সপ্তাহে তিন দিন বসে এই হাট। কয়েক বছর আগে পুজোর মুখে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ঠাসা থাকত। সেখানেও এ বার ভাটার টান। সমুদ্রগড় টাঙাইল ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য কার্তিক ঘোষেরও আক্ষেপ, ‘‘বিক্রিবাট্টা বলার মতো নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tant Saree Saree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE