Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তিন বছর পরে চালু ডায়ালিসিস

যন্ত্র কেনা হয়েছিল প্রায় বছর তিনেক আগে। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব ও প্রশাসনের লাল ফিতের গেরোয় বছর তিনেক ধরে চালু করা যায়নি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ডায়ালিসিস ইউনিটটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

যন্ত্র কেনা হয়েছিল প্রায় বছর তিনেক আগে। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব ও প্রশাসনের লাল ফিতের গেরোয় বছর তিনেক ধরে চালু করা যায়নি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ডায়ালিসিস ইউনিটটি। শেষমেশ বহু টালবাহানার পর বুধবার থেকে পিপিপি মডেলে হাসপাতালে চালু হল ডায়ালিসিস ইউনিট।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের গোড়ায় দুর্গাপুর (পূর্ব) কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে ডায়ালিসিস মেশিন কেনা হয়। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী না থাকায় ইউনিটটি চালু করা যায়নি তখন।

বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং নিখিলবাবু। বিধায়ক বেশ কয়েকবার ডায়ালিসিস ইউনিটটি চালুর দাবিতে ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস-এ ফ্যাক্স বার্তা পাঠান। বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি হাসপাতাল পরিদর্শনের সময়েও বিষয়টি নিয়ে সরব হন নিখিলবাবু। স্ট্যান্ডিং কমিটিরপ চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেশ পিপিপি মডেলে বেসরকারি সহযোগিতায় ইউনিটটি চালুর উদ্যোগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয়, ৫ শয্যা বিশিষ্ট ইউনিটটির যাবতীয় পরিকাঠামোগত সহযোগিতা দেবে হাসপাতাল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে বেসরকারি সংস্থা।

সেই মতো ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে দরপত্র ডাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেশ কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতার জেরে ওই দরপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফের দরপত্র ডাকা হয়। কিন্তু কোন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি বলে খবর।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে রাজ্যে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এক লাখেরও বেশি রোগীর ডায়ালিসিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু দিন কয়েক আগে পর্যন্তও এসএসকেএমে ১৫টি, আরজিকরে ছ’টি, নীলরতন সরকারে চারটি ও কয়েকটি জেলা হাসপাতালে ১৯টি সহ গোটা রাজ্যে মাত্র ৪৪টি ডায়ালিসিস যন্ত্র ছিল। ফলে ডায়ালিসিসের প্রয়োজন রয়েছে এমন অসংখ্য রোগী পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতেন। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডায়ালিসিস যন্ত্রের সংখ্যা ৪০০-র বেশি থাকলেও সামর্থ্যের অভাবে সেই পরিষেবা নিতে পারেন না অনেকেই। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্য জুড়ে পিপিপি মডেলে ডায়ালিসিস ইউনিট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু দীর্ঘ টালবাহানার জেরে বারবারই পিছিয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুরে ডায়ালিসিস ইউনিট চালুর কাজ। শেষমেশ ২০১৫-র মাঝামাঝি সময়ে দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সংস্থার নাম স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পাঠান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ছাড়পত্র আসে। এ দিন ইউনিটটি উদ্বোধন করেন বিধায়ক নিখিলবাবু। ছিলেন শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ও। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইউনিটে বেসরকারি সংস্থার তরফে ২ জন চিকিৎসক ও ৪ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী থাকবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন পর্যন্ত কিডনির সমস্যায় ভোগা রোগীদের অনেক বেশি টাকা খরচ করে শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোমগুলিতে ডায়ালিসিস করাতে হতো। বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে এক একবার ডায়ালিসিস করতে প্রায় আড়াই হাজার টাকার মতো খরচ হয়।এর জেরে বিপাকে পড়েন দুঃস্থ রোগীরা। সরকারি হাসপাতালে খরচ মোটে ৭৬০ টাকা বলে খবর। তবে বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষেরা বিনামূল্যেই পরিষেবা পাবেন বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাসেরও আশা, ‘‘ইউনিটটি চালু হওয়ায় বিশেষ করে দুঃস্থ রোগীরা উপকৃত হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durgapur sub-divisonal hospital dialysis unit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE