Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গুলি ছুড়ে শুরু হয় দেবীর বোধন

প্রায় ২০০ বছর আগে রাজস্থানের যোধপুর থেকে সুদূর কুলটির বেলরুই গ্রামে এসেছিলেন রাজপুত এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। পলাশের জঙ্গলে তৈরি করেন বিশাল জমিদার বাড়ি। জামিদারি চালাতে এঁরাই বসতি গড়তে শুরু করেন।

চলছে বন্দুক পরিষ্কার। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে বন্দুক পরিষ্কার। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৩০
Share: Save:

দেবীর বোধন ও বিসর্জনের দিন বন্দুকের গুলি ফাটানোই রীতি কুলটির বেলরুই গ্রামের রায় পরিবারের। তারাই এ গ্রামের জমিদার। দেড়শো বছর পেরিয়ে এখনও পরিবারের সবাই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। বন্দুকের গুলি ছোড়া দেখতে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা। প্রস্তুতি নিতে পুজোর দিন পনেরো আগে থেকেই বন্দুক পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়ে যায়।

প্রায় ২০০ বছর আগে রাজস্থানের যোধপুর থেকে সুদূর কুলটির বেলরুই গ্রামে এসেছিলেন রাজপুত এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। পলাশের জঙ্গলে তৈরি করেন বিশাল জমিদার বাড়ি। জামিদারি চালাতে এঁরাই বসতি গড়তে শুরু করেন। প্রজাদের আবদার মেটাতেই প্রায় ১৫০ বছর আগে জগৎ রায়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় দুর্গাপুজো। পরিবারের প্রবীণতম সদস্য নির্মলকৃষ্ণ রায় জানান, শুরুতে ছিল তালপাতার ছাউনি দেওয়া মন্দির। পরে হয় ঠাকুর দালান। তৎকালীন বার্ন কোম্পানি থেকে মন্দিরের লোহার বিম ও গ্রিল পাওয়া গিয়েছিল। এখন সেই ঠাকুর দালানে পুজোর কাজ চলছে জোরকদমে।

পরিবারের আর এক সদস্য বাচ্চু রায় জানালেন, ষাটের দশক পর্যন্ত এখানে মেলা বসেছে। যাত্রাপালার আসর বসেছে। বাচ্চুবাবু বলেন, ‘‘এখন আর সেই জৌলুস নেই। তবে পরিবারের ঐতিহ্য মেনে আজও বোধন ও বিসর্জনের দিন অন্তত ২৫টি বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়।’’ স্থানীয়েরাও জানালেন, বোধনের দিন গুলির আওয়াজ পেয়ে দূরের বাসিন্দারা বুঝতে পারেন দেবীকে বরণ করা হচ্ছে। পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রেখে বন্দুকের গুলি ছুড়তে পথে নামে এই প্রজন্মও। কলেজ পড়ুয়া শিল্পী রায় বলেন, ‘‘এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। বড়দের সঙ্গে আমরাও গুলি ছুড়ি।’’

আসানসোলের দু’নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বণসড়াকডিহি গ্রামের সাধু ও পাইক পরিবারের পুজোও বহু পুরনো। প্রায় পৌনে দু’শো বছর আগে গ্রামের মহিলা পুরুষেরা কয়েক ক্রোশ পথ হেটে ঠাকুর দেখে ফেরার পথে ঠিক করেছিলেন গ্রামেই একটি পুজো শুরু করবেন। পরের বছরই তালপাতার কুটির বানিয়ে শুরু হল পুজো। এখনও চলছে। পরিবারের প্রবীণ সদস্য কৃষ্ণগোপাল সাধু ও রাখহরি পাইকরা জানালেন, আড়ম্বর নেই তবে গ্রামবাসীদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোয়। বৈশিষ্ট্য বলতে আনুমানিক দেড়শো বছর ধরে বীরভূমের মহম্মদ বাজার থেকে ডাকের সাজ আসে। বিসর্জনের শেষে থাকে পংক্তি ভোজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Puja Preparation Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE