মঙ্গলবার হিরাপুরের ঢাকেশ্বরী বৃদ্ধাশ্রমে অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র
এক শিল্পীকে ঘিরে চার দিকে গোল হয়ে বসে ২২ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। শিল্পী গান ধরলেন, ‘আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে/ আছ তুমি হৃদয় জু়ড়ে।’ গুনগুনিয়ে উঠলেন প্রবীণেরাও।— এ ভাবেই হিরাপুরের ঢাকেশ্বরী বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর গানে-কবিতায় নির্ভেজাল আড্ডা দিলেন কুলটির মিঠানি গ্রামের কয়েক জন যুবক, যুবতী।
কিন্তু কেন এমন আয়োজন? ওই যুবক-যুবতীরা জানান, এক জন আড্ডায় সবাই মিলে ঠিক করেন, শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকলে চলবে না। সামাজিক কিছু দায়িত্বও পালন করতে হবে। ‘‘এই ভাবনা থেকেই যেখানে মানুষের পাশে থাকা দরকার, সেখানেই আমরা যাওয়ার চেষ্টা করি’’, বলছিলেন ওই যুবক-যুবতীদের সংগঠনের অন্যতম সদস্য দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই পরিকল্পনা সেই সূত্রেই নেওয়া। সংগঠনের অন্যতম সদস্য অর্পিতা চট্টরাজের কথায়, ‘‘এখানের আবাসিকেরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে বছরভর নিঃসঙ্গ থাকেন। একটি দিন অন্তত তাঁদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করলাম।’’
পরিকল্পনা মতোই চন্দ্রিমা চট্টরাজ-সহ ওই সংগঠনের অনেকেই এ দিন পৌঁছে যান ওই বৃদ্ধাশ্রমে। এই সদস্যদের কেউ বেসরকারি সংস্থার কর্মী, কেউ বা গৃহশিক্ষকতা করেন। অনেকে আবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাকরির পরীক্ষার। নিজেদের রোজগার হোক বা বাড়ি থেকে দেওয়া হাতখরচ বাঁচিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন তহবিল। সেই তহবিলের টাকা থেকেই এ দিনের যাবতীয় আয়োজন হয়েছে। এর আগে দুঃস্থ, মেধাবী পড়ুয়া, থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় পাশে থাকার মতো নানা কাজ করেছে সংগঠনটি।
এ দিন সকালে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে দেখা গেল, আশ্রমের এক প্রান্তে চলছে রান্নার আয়োজন। অন্য প্রান্তে বসেছে গান-কবিতার আসর। স্মৃতিচারণা করে আবাসিকেরা শোনাচ্ছেন, ফেলে আসা দিনের আনন্দ-দুঃখের কথা। ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১টা। শুরু হল, টেবিলে খাবার সাজানো। একে একে পাতে পড়ল, নুন, লেবু, লঙ্কা, ভাত, সোনামুগের ডাল। তার পরে এল, আলুপোস্ত, আলু পটলের ডালনা, চাটনি, পাঁপড়। আর শেষ পাতে দই, মিষ্টি।
খাওয়াদাওয়া শেষে খানিক বিশ্রাম। তার পরে ফের গল্পের আসর। খানিক বাদেই সন্ধ্যা নামল। ‘এ বার তবে আসি’, সংগঠনের সদস্যদের মুখে এ কথা শুনতেই যেন চোখ ছলছল করে ওঠে আবাসিকদের। তাঁদেরই এক জন ছবি মজুমদার গেয়ে উঠলেন, ‘এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে’। ‘রক্তকরবী’-র এই গানের অংশটিই হয়তো বলে গেল, ‘তোমায় গান শোনাব’। তা শুনতেই সময়-সুযোগ মতো আসবেন তাঁরাও, কথা দিলেন চন্দ্রিমারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy