Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আবাসিকদের চেষ্টায় কালনার বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই বৃদ্ধার

বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে আনার আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের সেই চেষ্টায় কালনার ওই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হল    বছর সাতাত্তরের শেফালি মজুমদারের।

খোশমেজাজে: আবাসিকদের সঙ্গে শেফালিদেবী। নিজস্ব চিত্র

খোশমেজাজে: আবাসিকদের সঙ্গে শেফালিদেবী। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

স্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা, মহাষষ্ঠীর সকালে সংবাদপত্রের এই খবর নজরে পড়েছিল বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের। প্রাক্তন শিক্ষিকার ওই পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে আনার আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের সেই চেষ্টায় কালনার ওই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হল বছর সাতাত্তরের শেফালি মজুমদারের।

কালনার টোলা গ্রামে বৃদ্ধাশ্রমটিতে রয়েছেন ১৩ জন আবাসিক। তাঁরা জানতে পারেন, হাওড়ার আন্দুল স্টেশনে পড়ে রয়েছেন শেফালিদেবী। পানিয়াড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই শিক্ষিকার স্বামী মারা গিয়েছেন বছর কুড়ি আগে। অবসর নেওয়ার পরে এককালীন পেনশনের টাকায় শিবপুরে বাড়ি করে বাস করছিলেন তিনি। পরে নতুন ফ্ল্যাট কেনার নাম করে একমাত্র ছেলে সেই বাড়ি বিক্রি করে দেয়। ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে তিনি গিয়ে ওঠেন মৌড়িগ্রামের ভাড়াবাড়িতে। এক সকালে শেফালিদেবী দেখেন, জিনিসপত্র নিয়ে স্বজনেরা চলে গিয়েছে। আর তাদের খোঁজ পাননি তিনি।

শেফালিদেবী জানান, এর পরে পেট চালাতে আয়ার কাজ করেছেন। কিন্তু তাতে বাড়িভাড়া মেটাতে পারেননি। মহালয়ার সকাল থেকে স্টেশনে দিন কাটাতে শুরু করেন তিনি। কেউ কিছু দিলে সেই খেয়েই থাকতেন। তাঁর এই পরিস্থিতির কথা বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকেরা জানান সেটির অন্যতম কর্তা তথা কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়কে। শেফালিদেবীকে এখানে আনার আর্জি জানান তাঁরা।

প্রণববাবু জানান, তিনি আন্দুল স্টেশনে ফোন করে শেফালিদেবীর সম্পর্কে খোঁজ নেন। তার পরে যোগাযোগ করেন কালনা থানার সঙ্গে। কালনা ও হাওড়ার পুলিশের সহযোগিতায় সপ্তমীর রাতে বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছন শেফালিদেবী। এ বছর এই বৃদ্ধাশ্রমে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। আবাসিকেরা জানান, দোতলায় চেয়ারে বসে পুজোর অনুষ্ঠান দেখেন শেফালিদেবী। প্রণববাবু জানান, অনেকের অর্থসাহায্যে নিখরচায় আবাসিকদের রাখা হয় এই বৃদ্ধাশ্রমে। আবাসিকের সংখ্যা বেড়ে গেলেও বিশেষ অসুবিধে হবে না, মনে করছেন তাঁরা।

রবিবার বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, অন্য আবাসিকদের সঙ্গে গল্পে মেতেছেন বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘আমার জীবনে কষ্টের কাহিনি রয়েছে। তবে সব ভুলে গিয়েছি এখানে এসে। আগের থেকে সুস্থও বোধ করছি।’’ বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক প্রদ্যুৎ সেন, গৌরি দত্ত, ডলি ঘোষ, রাসমনি সাহারা বলেন, ‘‘উনি খুব ভাল মানুষ। সহজেই আপন করে নিয়েছেন সকলকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shelter Old Age Home Elderly Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE