বিস্ফোরণ ঘটেছে এখানেই। গলসির ঢোলা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
ফের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল গলসিতে। মাসখানেক আগে আটপাড়ায় একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের পরিত্যক্ত শৌচাগারে বিস্ফোরণ হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ঢোলা গ্রামে এক ব্যক্তির গোয়ালঘরে বোমা ফাটে। এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। স্থানীয় সূত্রের দাবি, নজরুল শেখ ওরফে ডাবলু নামে যাঁর গোয়ালঘরে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে, তিনি এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই গোয়ালঘরেই বোমা মজুত করা ছিল। বিস্ফোরণ ঘটলেও তার তীব্রতা বিশেষ ছিল না। তাই ক্ষয়ক্ষতি তেমন কিছু হয়নি। ঘটনার পর থেকে নজরুল বা তাঁর পরিবারের কারও হদিস মেলেনি। তাঁদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কখনও বালি খাদানের দখল নিয়ে, কখনও আবার এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে— নানা কারণে বারবারই অশান্ত হয়ে উঠছে গলসি। শাসক দলের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালের জেরেই অশান্তি বাধছে বলে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রের দাবি, গলসি ১ ব্লকে দলের সভাপতি বদলের পর থেকে বিভিন্ন গ্রামে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ চলছে। সম্প্রতি শিড়রাই পঞ্চায়েতের রামনগর গ্রামে সংঘর্ষ, বোমাবাজি হয়। পুলিশ ওই গ্রাম থেকে ১৫টি বোমা ও একটি মাস্কেট উদ্ধার করে। তার আগে লোয়া-রামগোপালপুরের রানাডি গ্রামেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর ধর্মপুর আটপাড়া-হাজরাপাড়া শিশু কেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত শৌচাগারে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানেও মজুত বোমা ফেটে গিয়েই দেওয়াল ও টিনের চালের ঘরটি ভেঙে পড়েছিল বলে পুলিশের অনুমান। সিআইডি ঘটনার তদন্তে নেমেছিল।
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঢোলা গ্রামে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে অনেক দিন ধরেই বিবাদ চলছে। একটি গোষ্ঠীতে রয়েছেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিম মল্লিকের ঘনিষ্ঠেরা। আর একটিতে রয়েছেন গত পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল হিসেবে প্রার্থী হয়ে হাকিমের কাছে পরাজিত হাফিজুর শেখ। দু’পক্ষের গোলমালে বারবার অশান্তি, প্রাথমিক স্কুল চালাকালীন তার অদূরে বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এ দিন যাঁর গোয়ালঘরে বিস্ফোরণ ঘটে, সেই নজরুল হাকিমের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। বেশ কয়েকটি সংঘর্ষে অভিযুক্ত তিনি। কয়েকদিন আগে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালঘরটি বেশ নিচু। কয়েকটি গরু-ছাগল বাঁধা রয়েছে। বিস্ফোরণের জেরে মেঝেতে গর্ত তৈরি হয়েছে। বারুদের গন্ধ ভরে গিয়েছে আশপাশ। তবে চালা বা গবাদি পশুগুলির কোনও ক্ষতি হয়নি। আশপাশের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বিস্ফোরণের তেমন জোরাল শব্দ হয়নি। ট্রাকের টায়ার ফাটার মতো আওয়াজ শুনতে পান তাঁরা। তৃণমূল নেতা হাকিমকে এ দিন বারবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও। অপর নেতা হাফিজুর জানান, এ দিন সকালে তিনি গ্রামে ছিলেন না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুনেছি, বোমা ফেটেছে। দীর্ঘদিন ধরেই বোমা মজুত করা হয়েছে।’’
বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি (বর্ধমান সদর) রমেন শর্মার অভিযোগ, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে এলাকায় এলাকায় প্রচুর বোমা মজুত করেছে তৃণমূল। এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে।’’ গলসি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়ের যদিও বক্তব্য, ‘‘সমাজবিরোধী কাজ তৃণমূল করে না। পুলিশকে বলেছি, যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy