Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মৃত্যুতে ধন্দে পরিবার

কল্যাণী শিল্পাঞ্চল স্টেশনের কাছে রেললাইনে যে ছাত্রের দেহ মিলেছিল, দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে মানতে নারাজ তাঁর পরিবার। বরং তাঁদের ধারণা, তথাগত মণ্ডল নামে বছর কুড়ির ওই যুবককে খুন করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী ও আসানসোল  শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৩
Share: Save:

কল্যাণী শিল্পাঞ্চল স্টেশনের কাছে রেললাইনে যে ছাত্রের দেহ মিলেছিল, দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে মানতে নারাজ তাঁর পরিবার। বরং তাঁদের ধারণা, তথাগত মণ্ডল নামে বছর কুড়ির ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। যদিও ঘটনার তিন দিন পরেও, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পরিবারের তরফে কোথাও কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

পশ্চিম বর্ধমানের রূপনারায়ণপুর স্টেশনপাড়ায় বাড়ি তথাগতদের। নদিয়ার কল্যাণীতে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মেকানিক্যাল বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে শিল্পাঞ্চল স্টেশনের কাছেই রেললাইনে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। রেলপুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে তাদের প্রাথমিক অনুমান, তথাগত আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন।

কিন্তু আত্মহত্যার সম্ভাবনা মানতে পারছেন না তথাগতের পরিবার। এ দিন তাঁর বাবা রমাকান্ত মণ্ডল জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁর ছেলের সঙ্গে শেষ ফোনে কথা হয়। তখনও ছেলের কথাবার্তায় কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি তিনি। বাঁকুড়ায় তাঁদের দেশের বাড়িতে সোমবার একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। তথাগত সেখানে যাবেন কি না, তা তিনি জানতে চান। কলেজে পড়ার চাপ থাকায় তিনি যেতে পারবেন না বলে তথাগত জানিয়েছিলেন। তখন তিনি কল্যাণী শিল্পাঞ্চল স্টেশনের কাছে রয়েছেন বলেও জানান। ওই রাতেই কল্যাণী থেকে রেলপুলিশ ছেলের মৃত্যুসংবাদ জানায়।

তথাগতের পরিবারের দাবি, তিনি মাঝে-মধ্যে হস্টেলে সিনিয়র ছাত্রদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। সেটাই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াল কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিজনেরা। ঘটনার সময়ে তিনি একাই বেরিয়েছিলেন না কি সঙ্গে আরও কেউ ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাঁদের। তথাগতের সঙ্গে থাকা বই-খাতার ব্যাগ অক্ষত অবস্থায় মিলেছে। দেহ ছিন্নভিন্ন হলেও ব্যাগ কী করে অক্ষত থেকে গেল, সেই রহস্যের সমাধাও চাইছেন তাঁরা। রমাকান্ত বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, এটা খুন। আমি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে থানায় অভিযোগ করব।’’

তবে কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রদের অনেকেই জানাচ্ছেন, তথাগত শান্ত স্বভাবের ছেলে, কারও সঙ্গে তাঁর বিবাদও ছিল না। পড়াশোনা নিয়েই থাকতেন। দ্বিতীয় বর্ষ প্রায় শেষ হতে চলল। এত দিন বাদে সিনিয়র ছাত্রেরা তাঁকে নির্যাতন করবেন বা মারার চক্রান্ত করবেন, এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না কলেজের প্রায় কেউই। বরং রেলপুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তথাগতের বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক দিন ধরে তিনি মনমরা ছিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করায় ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ সৌরভকুমার দাস বলেন, ‘‘ওই ছাত্রটি কখনও র‌্যাগিং বা নির্যাতনের অভিযোগ করেননি। ওঁর বাড়ির লোকও করেননি। তবু আমরা নিজেদের মতো করে খোঁজ নিচ্ছি।’’

কল্যাণী শিল্পাঞ্চল যাদের আওতায় পড়ে সেই রানাঘাট জিআরপির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অরূপ ভৌমিক বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তা এলে জানা যাবে, এই ঘটনায় কোনও অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না।’’ তবে তথাগতদের হস্টেলের সবচেয়ে কাছে ঘোষপাড়া স্টেশন। শিল্পাঞ্চল স্টেশন বরং অনেকটাই দূরে। তথাগত কেন সেখানে যেতে গেলেন, সেই প্রশ্নও তাঁদের মাথায় রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Student Kalyani Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE