Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জলে পচছে আলু, মৃত্যু ভাগচাষির

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে মাধববাবুকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেন পরিবারের সদস্যেরা। রাত দেড়টা নাগাদ তাঁকে ভর্তি করানো হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

শোকার্ত মৃত চাষির পরিবার। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত মৃত চাষির পরিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

অপমৃত্যু হয়েছে এক আলুচাষির। মৃত মাধব মাঝির (৪৭) বাড়ি কালনা ১ ব্লকের বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের কয়া গ্রামে। তাঁর পরিবারের দাবি, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে চাষে বিপর্যয়ের কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলেছে মহকুমা প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে মাধববাবুকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেন পরিবারের সদস্যেরা। রাত দেড়টা নাগাদ তাঁকে ভর্তি করানো হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত চাষির পরিবারের দাবি, তাঁদের নিজেদের কোনও জমি নেই। বিঘে চারেক জমি চুক্তিতে নিয়ে ধান, আলু চাষ করেছিলেন মাধববাবু। কিন্তু আলু তোলার মুখে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। পরে আলু তুলতে গিয়ে দেখা যায়, জমিতেই পচে গিয়েছে সব। মৃতের স্ত্রী বিনারানি মাঝি বলেন, ‘‘ভাগে চাষ করতে গিয়ে গয়না বন্ধক দিয়েছিল আমার স্বামী। নানা জায়গা থেকে প্রায় লাখখানেক টাকা ধারও হয়েছিল। সেই চাপেই অমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল ও।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি জমিতে আলু চাষ করেছিলেন মাধববাবু। বিঘে দেড়েক জমির মধ্যে একটি ১২ কাঠা জমি থেকে মেলে মাত্র ১৩ বস্তা আলু। তাও বিক্রি করতে হয় বস্তা পিছু ১৩০ টাকা দরে। বাকি দুটি জমির সমস্ত আলুই পচে নষ্ট হয়ে যায়। মৃত চাষির ছেলে অজিত মাঝি বলেন, ‘‘একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও ঋণদায়ী সংস্থার কাছে প্রতি মাসে মোটা টাকা সুদ দিতে হত। চাষের ধাক্কা সামালাতে না পেরেই বাবা আত্মহত্যা করেছেন।’’

মাস খানেক আগে অতিবৃষ্টিতে আলু চাষে ক্ষতির অভিযোগ তুলে কৃষি দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কালনার কয়েকটি গ্রামের চাষিরা। কয়া গ্রামের চাষিরাও ছিলেন সেখানে। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাধববাবুর ইন্দিরা আবাসন প্রকল্পে তৈরি বাড়িতে তালা বন্ধ। বাড়ির সামনে ছোট গোয়াল ঘরে ঘাস খেতে ব্যস্ত কয়েকটি ছাগল। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু আলু। এ বাড়ি থেকে কয়েক পা হাঁটলেই ছিনোদি মাঠ। চৈত্রের মাঝ দুপুরে কড়া রোদেও আলু তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বহু চাষি। গ্রামবাসীদের দাবি, যেখানে বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ১২০ বস্তা আলু হয়। সেখানে এ বার ৫০ বস্তাও পেয়েছেন খুব কম জন। চাষের খরচই ওঠেনি বেশির ভাগের।

নেপাল মালিক, নিমাই সাঁতরারা জানান, একে তো বেশির ভাগ আলু পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার উপরে দর নেই। ফলে ঋণ শোধ করার পরিস্থিতিই নেই। আর এক চাষি উদয় ঘোষ জানান, মাধববাবুর কাছে ট্রাক্টরে জমি চাষ করতে দেওয়ার জন্য ৭০০ টাকা পেতেন তিনি। রবিবার টাকা চাইলে ৪০০ টাকা মিটিয়ে দেন মাধববাবু।

এ দিন একটি মানবাধিকার সংগঠনের তরফে কালনার মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে দাবি করা হয়, দেনার দায়ে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ওই চাষি। সংগঠনের তরফে সুভাষ ঢালি বলেন, ‘‘পরিবারটিকে যাতে এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা সরকারি সাহায্য দেওয়া হয় তার দাবি জানিয়েছি।’’ কালনার মহকুমাশাসক নীতিশ ঢালি জানান, পুরো ঘটনা নিয়ে বিডিওকে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তার পরেই ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কিছু বলা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Farmer Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE