Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
নজরে কৃষি
Farmer

মজুর আনতে গাড়ি নিয়ে ভিন‌্-রাজ্যে

কালনার বাজিতপুর গ্রামের চাষি সাদ্দাম শেখ জানান, গ্রামের কাদের মণ্ডল, মিন্টু শেখ, মোল্লা ওয়াজেদ রহমান, সুকুর আলির মতো চাষিরা খেতমজুর না আসায় ইতিমধ্যেই গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের পাকুড়, দুমকা এলাকায়।

মাঠে পেকে রয়েছে ধান। সকালের কুয়াশায় শীতের আমেজ। বর্ধমান ২ ব্লকের টোটপাড়ায়। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস

মাঠে পেকে রয়েছে ধান। সকালের কুয়াশায় শীতের আমেজ। বর্ধমান ২ ব্লকের টোটপাড়ায়। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ০০:৫৭
Share: Save:

আমন ধান তোলা শুরু হয়েছে। ঠান্ডার আমেজ পড়তেই আলু বীজ লাগানোর কাজও আসন্ন। প্রতিবারই পূর্ব বর্ধমানে খেতমজুরের চাহিদা তুঙ্গে থাকে এই সময়। চাষিদের দাবি, করোনা সংক্রমণের কারণে ট্রেন না চলায় এ বার ভিন্‌ জেলা এবং রাজ্য থেকে খেতমজুরদের আসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। মজুর না পেলে, ধান কাটা বা আলু লাগানোর কাজ পিছিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

প্রতি বার অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঝাড়খণ্ড, মুর্শিদাবাদ, মালদহ থেকে প্রচুর খেতমজুর আসেন জেলায়। চাষিদের দাবি, এ বার ভিন্‌ রাজ্যের শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানিয়ে দিচ্ছেন, ট্রেন না চলায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের। আবার করোনা-পরিস্থিতির কারণেও অনেকে নিজেদের এলাকা থেকে বেরোতে চাইছেন না। বাধ্য হয়ে অনেক তুলনামূলক সম্পন্ন চাষি নিজেরাই গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যাচ্ছেন শ্রমিকদের নিতে। নিজেদের খামারবাড়িতেই শ্রমিকদের এনে রাখার ব্যবস্থাও করছেন অনেকে। যদিও কৃষিকর্তাদের দাবি, হারভেস্টর যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে মজুর-সঙ্কট অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব। চাষিদের খরচও সে ক্ষেত্রে কম হবে, দাবি তাঁদের। যদিও চাষিদের পাল্টা দাবি, আমন ধানের খড় গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হারভেস্টর যন্ত্রে ধান কাটলে সে ভাবে খড় মেলে না। আবার গাছের গোড়া থেকে কিছুটা ছেড়ে কাটা ধানে যে খড় পড়ে থাকে তাতে ‘নাড়া’ পোড়ানোর প্রবণতাও বাড়ে।

জেলার অন্যতম সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘এটা ঠিক, যে আমাদের জেলায় বর্তমানে যা খেতমজুর রয়েছে তার থেকে এই সময়ে অনেক বেশি খেতমজুরের প্রয়োজন হয়। ট্রেন না চলায় ভিন্‌ এলাকা থেকে খেতমজুরদের আসার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা চাষিদের যন্ত্রের প্রতি ঝোঁকার পরামর্শ দেব।’’ মন্তেশ্বর ব্লকের কৃষি আধিকারিক কনক দাসও বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় আমপানের আগে থেকেই চাষিদের হারভেস্টর যন্ত্রে ধান কাটার জন্য বেশি করে উৎসাহিত করছি। এই যন্ত্রের বেশি করে ব্যবহার শুরু হলে আশা করছি, সমস্যা হবে না।’’

কালনার বাজিতপুর গ্রামের চাষি সাদ্দাম শেখ জানান, গ্রামের কাদের মণ্ডল, মিন্টু শেখ, মোল্লা ওয়াজেদ রহমান, সুকুর আলির মতো চাষিরা খেতমজুর না আসায় ইতিমধ্যেই গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের পাকুড়, দুমকা এলাকায়। সেখান থেকে শ্রমিকদের একজোট করে নিয়ে আসবেন তাঁরা। এক-একটি গাড়িতে ৩০ জন করে খেতমজুর আনা যাবে। সে জন্য গাড়িপিছু চাষিদের ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হবে বলেও জানান তিনি। ওই এলাকার চাষিদের দাবি, খেতমজুরদের প্রতিদিন ২০০ থেকে ২২০ টাকা মজুরি দিতে হয়। তার সঙ্গে আনার গাড়ি খরচ রয়েছে। কিন্তু এই মরসুমে তা করা ছাড়া, উপায় নেই। মেমারির কৃষিজীবী সুনীল সরকার বলেন, ‘‘প্রতিবারই ঝাড়খণ্ড থেকে খেতমজুরেরা আসেন। এ বার ট্রেন না চলায় ওঁরা আসতে পারেননি। কী ভাবে ধান তোলা এবং আলু বীজ লাগানোর কাজ শেষ করব, তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের তরফে অবশ্য এই পরিস্থিতিতে পরিয়ায়ী শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কালনার হাটকালনা পঞ্চায়েতের প্রধান শুভ্র মজুমদার বলেন, ‘‘এখনও বহু পরিযায়ী শ্রমিকেরা রয়েছেন এলাকায়। তাঁদের খেতমজুরের কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রয়োজনে কিছুটা প্রশিক্ষণও দেওয়া যেতে পারে।’’ যদিও চাষিদের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকেরা বেশির ভাগই রাজমিস্ত্রি বা গয়নার কাজ করেন। অভিজ্ঞতার ঘাটতিতে খেতমজুরি করতে পারবেন না তাঁরা। আবার প্রশিক্ষণ দিতে গেলে ধান কাটার মরসুম পেরিয়ে যাবে, দাবি তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Kalna Peddy Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE