Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জমিতে এসে দেখুন কর্তারা, দাবি চাষিদের

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারের পরে আরও বেশি এলাকায় আলু চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়লেও পেঁয়াজ বা সর্ষে চাষে ক্ষতির বহর বাড়েনি। তবে নতুন করে কাটোয়া ও কালনা থেকে বোরো চাষের জমি ‘জলমগ্ন’ বলে জেলায় রিপোর্ট পৌঁছেছে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, বুধবারই কালনা মহকুমায় ১১,৪৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষে ক্ষতির আশঙ্কার রিপোর্ট জমা পড়েছিল।

চাষের জমি না পুকুর, দেখে বোঝা মুশকিল। কালনার আটঘোড়িয়ায় বৃহস্পতিবার। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

চাষের জমি না পুকুর, দেখে বোঝা মুশকিল। কালনার আটঘোড়িয়ায় বৃহস্পতিবার। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

জেলায় এ বার ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমির আলু ক্ষতির মুখে। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি দফতর থেকে এই রিপোর্ট পাঠানো হল রাজ্য কৃষি দফতরে। বুধবার রাত থেকে বেশ কিছু ব্লকে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হলেও কোথাও শিলাবৃষ্টির খবর নেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারের পরে আরও বেশি এলাকায় আলু চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়লেও পেঁয়াজ বা সর্ষে চাষে ক্ষতির বহর বাড়েনি। তবে নতুন করে কাটোয়া ও কালনা থেকে বোরো চাষের জমি ‘জলমগ্ন’ বলে জেলায় রিপোর্ট পৌঁছেছে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, বুধবারই কালনা মহকুমায় ১১,৪৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষে ক্ষতির আশঙ্কার রিপোর্ট জমা পড়েছিল। বৃহস্পতিবার বর্ধমান সদর মহকুমা কৃষি দফতর থেকে জেলা দফতরে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩০৫টি মৌজায় প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায়। মঙ্গলবার পর্যন্ত কাটোয়া মহকুমায় তেমন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বুধবার কেতুগ্রাম ১ ও মঙ্গলকোটে ভাল বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার কাটোয়া মহকুমা কৃষি দফতর রিপোর্ট দিয়েছে, চাষযোগ্য প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায়। তার মধ্যে আলু চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা ২১৭৬ হেক্টরে।

চাষিরা জানান, গত মরসুমে আলু হিমঘরে মজুত রেখে ভাল দর পাবেন বলে আশা করেছিলেন অনেকে। সেই টাকায় এ বার চাষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, সেই আলু লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে। তাই অনেককেই এ বার ঋণ নিয়ে চাষ করতে হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলনও ভাল হচ্ছিল। কিন্তু ফসল তোলার মুখে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে। বৃহস্পতিবার কালনার আটঘোরিয়া-সিমলন, বেগপুর, সুলতানপুর, হাটকালনার বহু জমি থেকে চাষিদের নানা ভাবে জল বাইরে বার করার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। নিচু এলাকায় অনেকে জমা জল বার করতে না পেরে পেঁয়াজ, আলু যেটুকু পাওয়া যায়, তা তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন।

কালনার বৃদ্ধপাড়া গ্রামের জামালউদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘সাড়ে চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। সব জলে ডুবে রয়েছে। বেশিরভাগ আলু পচে যাচ্ছে।’’ আর এক চাষি নবির আলি শেখের দাবি, জল-কাদা থেকে কিছু আলু তুলে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ আলুই পচা। রসুলপুরের সাইদুল ইসলাম, সাতগেছিয়ার আলম শেখ, শক্তিগড়ের জীবনকৃষ্ণ রায়দেরও দাবি, ‘‘একে আলুর দাম নেই। তার উপরে এই বৃষ্টিতে যেটুকু আলু বাঁচবে, তা নিম্নমানের হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ দিলে ভাল হয়।’’ তাঁদের আর্জি, কৃষিকর্তারা মাঠে এসে সমস্যা দেখুন। একই দাবি সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব থেকে নানা কৃষক সংগঠনের।

গলসির তেঁতুলমুড়ির আলু চাষি শেখ সামিউল, বেলানের উজ্বল ঘোষ, ছালালপুরের শেখ রূপজাহানেরা বলেন, ‘‘জমি থেকে কোনওরকমে কিছু আলু তুলে নেওয়া হচ্ছে। তা বাড়িতেই রাখতে হবে। সেই আলুও তো পচবে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না!’’ গলসির মজদিপুর সমবায় সমিতির ম্যানেজার কেনারাম মাকড় বলেন, ‘‘বেশির ভাগ চাষিই আমাদের সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন। তাঁরা শোধ করবেন কী ভাবে, জানি না!’’

পেঁয়াজ এবং আনাজের ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে উদ্যান পালন দফতর। দফতরের জেলা আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঘরাই বলেন, ‘‘পেঁয়াজ চাষের পাশাপাশি পেঁয়াজের বীজও তৈরি করেন বহু চাষি। তার উপরে নির্ভর করে পরের মরসুমের চাষ। বিপর্যয়ে ক্ষতি হয়েছে বীজের চাষও। তবে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি।’’ কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ইনসান মল্লিক জানান, সরকার আগেও চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ বারও বিষয়টি কৃষিকর্তাদের নজরে আনা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘আলু অর্থকরী ফসল। সে জন্য এখনই ক্ষতিপূরণ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। ক্ষতির রিপোর্ট আসার পরে এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হবে।’’ তবে তিনি জানান, যাঁদের ফসলবিমা রয়েছে তাঁরা যেন বিমা পান, সে জন্য কৃষি দফতরের কর্তাদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। চাষিদের বিমা সংক্রান্ত নথি নিয়ে সহ-কৃষি আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Potato Loss Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE