Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
বাড়ি-বাড়ি যাবে কৃষি দফতর

ফসলবিমায় সাড়া নেই চাষিদেরই

কোনও বছর অতিবৃষ্টির জন্য ফসল ভেসে যায়। আবার কখনও সেচের জলের অভাবে মাঠে শুকিয়ে যায় ফসল। সপ্তাহ দুয়েক আগেই সেচের জলের অভাবে মাথায় হাত পড়েছিল জেলার নানা এলাকার চাষিদের।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৮
Share: Save:

কোনও বছর অতিবৃষ্টির জন্য ফসল ভেসে যায়। আবার কখনও সেচের জলের অভাবে মাঠে শুকিয়ে যায় ফসল। সপ্তাহ দুয়েক আগেই সেচের জলের অভাবে মাথায় হাত পড়েছিল জেলার নানা এলাকার চাষিদের। শিলাবৃষ্টির জন্য ২০১৫ সালে রবি মরসুমে ফসলে ক্ষতির ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকে। কিন্তু এ সবের পরেও ফসলের বিমা করানোয় গা নেই চাষিদের, জানাচ্ছে কৃষি দফতর।

ফসলবিমার জন্য চাষিকে কোনও খরচ করতে হয় না। তবু এ ব্যাপারে তাঁদের সাড়া না পেয়ে জেলা কৃষি দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রবি মরসুমে বিমা করানোর জন্য দফতরের কর্মীরা চাষিদের বাড়ি-বাড়ি যাবেন। এক কৃষি-কর্তার কথায়, ‘‘জেলা জুড়ে কৃষকের তথ্য সংগ্রহের অভিযান চলছে। চাষিদের বাড়ি গিয়ে ফসল বিমা করালে কী লাভ হবে, সেটা জানানো হয়েছিল। তারও আগে বিভিন্ন ভাবে বিমা নিয়ে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু চাষিদের ঘুম ভাঙেনি। এ বার দরজায় কড়া নেড়ে দেখতে হবে, ঘুম ভাঙে কি না!’’

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে সাড়ে পাঁচ লক্ষ কৃষক পরিবার রয়েছে। কিসান ক্রেডিট কার্ড (‌কেসিসি) রয়েছে সাড়ে চার লক্ষ পরিবারের। আর ফসল বিমার আওতায় রয়েছে মাত্র এক লক্ষ ৯৪ হাজার পরিবার। দফতরের এক কর্তা দাবি করেন, ‘‘ফসলবিমার আওতায় থাকা পরিবারগুলির মধ্যে এক লক্ষ ৮০ হাজার পরিবারের কেসিসি ঋণ রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা বিমার আওতায় রয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, সরকারি ঋণের আওতায় নেই এমন পরিবারের সংখ্যা গত খরিফ মরসুমেও ছিল ৭০ হাজারের বেশি। এ বার সেখানে ১৪ হাজারে নেমে এসেছে। কৃষি দফতরের ব্যাখা, গত বছর বিমা সংস্থাগুলি দফতরের মাধ্যমে গ্রামে-গ্রামে ‘মোটিভেটর’ নিয়োগ করেছিল। সে জন্য চাষিরা উৎসাহিত হয়েছিলেন। আর এ বার স্থানীয় কোনও তথ্যমিত্র কেন্দ্র থেকে অনলাইনের বিমার ফর্ম পূরণ করার জন্য বলা হয়েছে চাষিদের। তাতে চাষিরা আর বিমা করানোর বিষয়ে উৎসাহিত হচ্ছেন না।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল হয়। কোনও এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার পরে সেখান থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। তার পরে শেষ সাত বছরের উৎপাদনের সঙ্গে বিপর্যয়ের বছরে উৎপাদন তুলনা করে ফসল কতটা মার খেয়েছে, তার রিপোর্ট বিমা সংস্থার কাছে পাঠাতে হয়। তার পরে সেই সংস্থা নিজেদের আধিকারিক পাঠিয়ে সরকারের দেওয়া তথ্য যাচাই করে বিমা দেন।

কৃষি-কর্তাদের একাংশের দাবি, গোটা প্রক্রিয়াটিতে দু’তিন বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে, চাষিদের বিমার সুযোগ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকছে না। কর্তারা জানান, রাজ্য সরকারের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দফতর ও বিমা সংস্থার কাছ থেকে হেক্টর প্রতি ৮৮,৫০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন চাষিরা। কিন্তু তাঁদের গা না থাকায় বিমার ক্ষতিপূরণের সুযোগ হারাচ্ছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার চাষিদের নিখরচায় ফসল বিমা করিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা দেখেছি চাষে ক্ষতি হলে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ বিমা সংস্থা ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করছে। চাষিদের ঠিক ভাবে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। তাই মুখ্যমন্ত্রী বিকল্প ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে চাষিরা ক্ষতিপূরণের টাকা ঠিকমতো পান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Interest farmer Crop Insurance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE