Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব চাষি

বৃষ্টিও হচ্ছে দু’এক পশলা। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের দ্রুত বিমার টাকা দেওয়ার দাবি যেমন উঠছে, তেমনই ক্ষতিপূরণের দাবিও জোরাল হচ্ছে।

বর্ধমানে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমানে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:১৫
Share: Save:

বাড়তি ফলনের আভাসে দেখা গিয়েছিল আশঙ্কার মেঘ। তার পরে অকাল বৃষ্টি ‘জল’ ঢেলে দিয়েছে আলু চাষে। টানা চার দিন বৃষ্টির পরেও মাঝে-মধ্যে আকাশ ঘনিয়ে আসছে। বৃষ্টিও হচ্ছে দু’এক পশলা। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের দ্রুত বিমার টাকা দেওয়ার দাবি যেমন উঠছে, তেমনই ক্ষতিপূরণের দাবিও জোরাল হচ্ছে।

সিপিএমের জেলা কমিটি বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে চাষে ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে। আবার আলুর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বস্তা প্রতি ৩৫০ টাকা করারও দাবি জানিয়েছে তারা। মঙ্গলবার কার্জন গেট চত্বরে এসইউসি-র তরফে আলুচাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে জেলা প্রশাসনের কাছে একটি দাবিপত্রও জমা দেয় তারা। সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ কর দাবি করেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে আলু চাষিরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাতে তাঁদের পক্ষে ঋণ মেটানো সম্ভব নয়। এই পরিস্থতিতে সরকারকে চাষিদের পাশে দাঁড়তেই হবে।’’

কৃষি দফতরের হিসাবেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষের এলাকা। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় আলু চাষের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল ৪০ হাজার হেক্টর। মঙ্গলবার তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার হেক্টর। কৃষি দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্ধমান সদর এলাকায় ৮৮টি পঞ্চায়েতে ৬২৮টি মৌজায় আলু চাষে ৩৭,২২৯ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কালনা মহকুমায় ১৩,৬৩০ হেক্টর জমির আলু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কাটোয়া মহকুমায় ২১৭৬ হেক্টরের আলু ক্ষতির মুখে। তবে একমাত্র কাটোয়াতেই ১০,৬০৬ হেক্টরে বোরো ধান ও ৩০০ হেক্টরে গ্রীষ্মকালীন ফসলে ক্ষতি হবে বলে জানানো হয়েছে।

জামালপুরের চাষি আব্দুর রহমান, মেমারির পলাশ সাঁতরাদের অভিযোগ, ‘‘সব জমিই জলের তলায় চলে গিয়েছে। তার মধ্যেও যেটুকু আলু বাঁচানো গিয়েছে, তা-ও পচে যাচ্ছে। আলুতে দাগ দেখা দিয়েছে। সেগুলি বিক্রি করা বা খাওয়া যাবে না।’’ কালনা ১ ব্লকের চাষি রমজান শেখের কথায়, ‘‘প্রথম বৃষ্টির ধাক্কায় বেশির ভাগ আলু জমিতে পচে গিয়েছে। যেটুকু ভাল আলু ছিল তা মাটি সরিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সেটা বন্ধ করতে হয়েছে।’’ আর এক চাষি রমেশ সাঁতরা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখে ভাবছি, আলু তোলার চেষ্টা না করে ওই জমিতেই ধান চাষ করব।’’

জামালপুরের জারনগর এলাকার তৃণমূল নেতা জুলফিকার শেখের কথায়, “এলাকার ১২ হাজার হেক্টর জমির আলু নষ্ট হতে বসেছে। ব্যাঙ্ক-বিমা সংস্থার লোকজনকে ধরে জমিতে আনতে হচ্ছে, যাতে চাষিরা বিমার টাকা তাড়াতাড়ি পান।’’

কৃষি দফতর জানায়, বিমা সংস্থা ও কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা যৌথ ভাবে জমি পরিদর্শন করছেন। প্রতিটি পঞ্চায়েতের চারটি করে মৌজা থেকে ফসলের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘‘নমুনা সংগ্রহের পরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হবে। সেই রিপোর্ট রাজ্যে পাঠিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য অনুরোধ জানানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agriculture Farmer Agitation Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE