লক্ষ্মীগঞ্জের জমিতে পুড়ছে ধানগাছ।
অল্প জলে চাষের প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য চাষিদের অনুরোধ করলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার আউশগ্রাম ১ ব্লকের কিসানমান্ডিতে তিনি যখন এ কথা বলছেন, সেখান থেকে কিলোমিটার চারেক দূরে লক্ষ্মীগঞ্জের মাঠে জলের অভাবে শুকিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ধানের জমিতে আগুন ধরালেন এলাকার কিছু চাষি।
রবিবার আউশগ্রাম ১ ব্লকের কৃষিমেলার সূচনা করেন কৃষিমন্ত্রী। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে কম জলে চাষের প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেন কৃষিমন্ত্রী। দু’জন চাষিকে স্প্রিংলার যন্ত্র দেওয়া হয়। এলাকার চাষিদের এই সমস্ত যন্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। যে সব এলাকায় সেচের সমস্যা রয়েছে সেখানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষে উৎসাহিত করা হবে, জানান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপবাবু। বিকল্প চাষে জোর দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
তবে এ দিনই আউশগ্রামের দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীগঞ্জের চাষি বুড়ো টুডু, টিবুরাম হাঁসদা, নারাণ হাঁসদা, মুনু হাঁসদা, গোলাম হেমব্রমেরা শুকিয়ে যাওয়া ধানের জমিতে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, সেচখালের জলের উপরে ভরসা করে তাঁরা আমন ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু খালে হঠাৎ জল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সমস্যায় পড়েন। প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে তাঁদের দাবি।
আউশগ্রাম ১ ব্লক কৃষিমেলার উদ্বোধনে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ প্রশাসনের আধিকারিকেরা। রবিবার।
মুংলি টুডু নামে এক চাষির কথায়, ‘‘দেনা করে ১১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। জলের অভাবে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শুকনো ধান কেটে কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছি।’’ আর এক চাষি মুনু হাঁসদা বলেন, ‘‘বাড়িতে যা সম্বল ছিল তা বিক্রি করে চাষ করেছি। ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কী করব বুঝতে পারছি না।’’ চাষিদের দাবি, মাঝে সেচের জল দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছিলেন। কিন্তু তা এই এলাকা পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি। এলাকায় সরকারি প্রকল্পে আদিবাসীদের জন্য পাঁচটি পাম্প বসানো হয়েছিল। কিন্তু বিল বাকি থাকায় সেগুলি বছর চারেক ধরে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ধান শুকিয়ে গেলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। কৃষিমেলায় আমাদের ডাক মেলেনি। তাই জমিতে ধান পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালাম।’’
ধান পোড়ানোর কথা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবতনু মাইতি। তবে এ বার এলাকায় সেচের জলের সমস্যার কথা মেনে নেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘বিল্বগ্রাম, গুসকরা ২, বেরেন্ডা, আউশগ্রাম ও দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে সেচের সমস্যা হয়েছিল।’’ এ বার নানা এলাকায় চাষিরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বেশ কিছু জায়গায় সাবমার্সিবল পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ জুড়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। ওই এলাকার চাষিরা কেন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেননি, তা দেখা হবে বলে জানান দেবতনুবাবু।
ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy