Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

খনি-কারখানা চালু, বাস কম রাস্তায়

পেট্রল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ-সহ কয়েকটি দাবিতে সোমবার কংগ্রেস ও বামেরা ভারত বন্‌ধ ডেকেছিল। তবে তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি জেলায়। ছোটখাটো দু’একটি গোলমাল ছাড়া বড় কোনও অশান্তির খবরও নেই।

দুর্গাপুরে আটক সিপিএম কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুরে আটক সিপিএম কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

পেট্রল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ-সহ কয়েকটি দাবিতে সোমবার কংগ্রেস ও বামেরা ভারত বন্‌ধ ডেকেছিল। তবে তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি জেলায়। ছোটখাটো দু’একটি গোলমাল ছাড়া বড় কোনও অশান্তির খবরও নেই।

এ দিন দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি জায়গায় কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে স্কুল-কলেজ, অফিস, কল-কারখানায় হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। কম বাস রাস্তায় নামায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া, মায়াবাজারের কাছে আসানসোল-হাওড়া অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসকে আটকে দেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ ও রেল পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। কয়েক মিনিট পরে ট্রেন চালু হয়। এ দিকে, দুর্গাপুর স্টেশনে সিপিএমের বন্‌ধ সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। জোর করে স্টেশনে ঢুকে রেল অবরোধের চেষ্টা করেন তাঁরা। এ দিন মোট ১৬৪ জন সিপিএমের কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে কয়েক ঘণ্টা পরে জামিনে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও সিটি সেন্টার-সহ দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন পেট্রল পাম্পে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পানাগড় বাজারে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে বন্‌ধে সামিল হয়েছেন।’’

প্রায় একই চিত্র রানিগঞ্জ, জামুড়িয়ায়ও। ইসিএলের সব খনিতেই অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। এ দিন সকালে রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, হরিপুর ও অণ্ডালে অর্ধেকের বেশি বাস বন্ধ ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ বাস বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি বাস চললেও তাতে সমস্যা মেটেনি নিত্যযাত্রীদের। সময়ে বাস না পেয়ে অনেকেই বেশি ভাড়া দিয়ে টোটো-অটোয় গন্তব্যে যান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পড়ুয়াদের সংখ্যা ছিল কম। সকালে কাজোড়া ও উখড়ায় সিপিএমের মিছিল বার হতেই বেশিরভাগ দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তৃণমূলের পাল্টা মিছিলের পরে আবার দোকানগুলি খুলে যায়। এ নিয়ে ওই দু’টি বাজার এলাকায় সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। অবশ্য পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে আসানসোল শিল্পঞ্চলেও বন্‌ধের তেমন প্রভাব চোখে পড়েনি। সরকারি বেসরকারি শিল্প কারখানা এবং সরকারি দফতরেও হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। তবে অন্য দিনের তুলনায় রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম ছিল। সাধারণ মানুষজনও রাস্তায় কম বেরিয়েছেন। দুর্গাপুরের মতো আসানসোল স্টেশনে দু’টি ট্রেনের যাত্রাপথ আটকানোর চেষ্টা করা হয়। রাস্তায় ঘনঘন পিকেট করতে দেখা গিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেসের সদস্য-সমর্থকদের। পথ অবরোধের চেষ্টা করা হলে পুলিশের সঙ্গে বন্‌ধ সমর্থকদের ধস্তাধস্তিও হয়। তবে, মোটের উপর বন্‌ধ ছিল শান্তিপূর্ণ। এখানে কোনও গ্রেফতারির খবর নেই।

কুলটির নিয়ামতপুরে সিপিএম ও কংগ্রেস সদস্য-সমর্থকেরা জিটিরোড চৌমাথায় পিকেট করার পরেই রাস্তায় বসে পড়েন। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ পৌঁছয়। আসানসোল বাজারে দোকানপাট খুলতে সিপিএম সমর্থকেরা বাধা দেন বলে অভিযোগ। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মিছিল বার হয়। সকালের দিকে আসানসোল বাজারে কিছু দোকানপাট খুলেছিল। সিপিএমের মিছিল ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সমর্থকেরা জোর করে দোকানের ঝাঁপ ফেলে দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে দোকান খোলানোর ব্যবস্থা করে। শহর পরিক্রমা করার পরে সিপিএমের মিছিলটি আসানসোলের বিএনআর মোড়ে উপস্থিত হয়। সেখানেই জিটিরোডের উপরে বসে পড়েন বন্‌ধ সমর্থকেরা। রাস্তা অবরোধ শুরু হওয়ায় দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন একদল তৃণমূল সমর্থক। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাঁধে। পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়। রানিগঞ্জেও মিছিলের পরে পথসভার করে সিপিএম। সেখানে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, বিধায়ক রুনু দত্ত।

রাস্তা অবরোধের পাশাপাশি কংগ্রেসের শতাধিক সদস্য-সমর্থক আসানসোল বাজারে পিকেট করেন। কয়েকটি গাড়িকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেন। এর পরে তাঁরা আসানসোল স্টেশনে উপস্থিত হন। সেখানে ৬ ও ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসা যথাক্রমে পটনা-হাওড়া এক্সপ্রেস ও জনশতাব্দি এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে বন্‌ধের কোনও প্রভাব পড়েনি বার্নপুরের ইস্কো কারখানায়। ইস্কো ও চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার ও মন্তার সিংহ জানান, স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে।

এই বন্‌ধের বিরোধিতা করে এবং পেট্রল, ডিজেল-সহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তৃণমূলের জামুড়িয়া ২ ব্লক কমিটি মিছিল করে। মিছিলটি চিচুরিয়া মোড় হয়ে খাসকেন্দায় শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন ব্লক সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। আর রাজ্যের পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করছে। এ সব দিদি-মোদী আঁতাতের ফল।’’

আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের বক্তব্য, ‘‘বন্‌ধের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। পশ্চিমবঙ্গে খুব একটা যে কাজকর্ম হচ্ছে তা তো নয়। কংগ্রেসকে মনে রাখতে হবে, পেট্রোলের মূল্য সরকার নির্ধারণ করবে না সেই সিদ্ধান্ত তাদের আমলেই হয়েছিল। বসুন্ধরা রাজে ৪ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছেন। আমি রাজ্যকে অনুরোধ করব, মুখ্যমন্ত্রী যদি মনে করেন, ভ্যাট বা এক্সাইজ ডিউটি যা রাজ্য পায় তা কমিয়ে দিতে পারেন। তাহলে খানিকটা দাম কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Strike Mine Factory open
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE