Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জ্বলছে আগুন খনির মাঝে

বার বার অবৈধ খননের অভিযোগ সামনে আসার পরে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের ক্ষোভ, ‘‘শাসক দলের মদতে হয় এমনটা। প্রশাসন সব জেনেও নির্বিকার।’’

বুধবার নতুন করে তিন জায়গায় বার হল আগুন, ধোঁয়া। চুরুলিয়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

বুধবার নতুন করে তিন জায়গায় বার হল আগুন, ধোঁয়া। চুরুলিয়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫০
Share: Save:

গত কয়েক দশক ধরে একের পর এক খনিতে আগুন। তা সে বৈধ হোক বা ‘অবৈধ’, সর্বত্রই আগুনে বিপত্তি ঘটছে জেলার খনি অঞ্চল জুড়ে। অবৈধ খননের জেরেই চুরুলিয়া-সহ জেলার নানা প্রান্তে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি। সেই সঙ্গে তাদের প্রশ্ন, অবৈধ খননের কথা জানা সত্ত্বেও কেন তা বন্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।

২০০৮ সাল। জামুড়িয়ার সাতগ্রামে পর পর সাতটি অবৈধ খাদানে আগুন লেগেছিল বলে জানা যায়। ওই বছরই প্রায় একই সময় কিছু দিন বন্ধ থাকা ইসিএলের নিমচা খোলামুখ খনিতে আগুন ধরে। এই ঘটনায় এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। এসেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের কয়লা ও ইস্পাত বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধিরাও। কিন্তু তার পরেও অবৈধ খনন বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর তাই ফের ২০১৩-য় জামুড়িয়ার বেলবাঁধ খোলামুখ খনিতে আগুন ধরে বলে শ্রমিক নেতৃত্বেরা জানান।

কিন্তু খনিতে অবৈধ খননের ফলে কী ভাবে আগুন ধরে? সোদপুর এরিয়ার সিনিয়রওভারম্যান সঞ্জয় মাজি জানান, কয়লার বেশির ভাগ অংশই কার্বনযুক্ত। ফলে হাওয়ার তথা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে কার্বনডাইঅক্সাইড ও কার্বনমনোক্সাইড তৈরি হয়। এটি একটি ‘তাপ উৎপাদক রাসায়নিক বিক্রিয়া’। তাই অনেক দিন ধরে হাওয়ার সংস্পর্শে কয়লা থাকলে ক্রমাগত তাপ উৎপাদনের ফলে আগুন ধরে। এ ছাড়া খনিতে শটসার্কিটের কারণেও কয়লার স্তরে আগুন ধরে।

এ ছাড়া অবৈধ খনিতে নিয়ম না মেনে আগুন জ্বালালে, এমনকি ধুমপান করলেও দুর্ঘটনা ঘটে। খনিগর্ভে মিথেন তৈরি হলে তা আগুনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফারণ ঘটতে পারে। অবৈধ পদ্ধতিতে কয়লা কাটার পর খোলামুখগুলো ঠিক পদ্ধতিতে বন্ধ না করলেও এক সময় আগুন ধরবে বলেই জানান খনিকর্মীরা। এর জেরে কয়লা স্তরে আগুন ধরে লাগোয়া বৈধ খনিগুলিতেও বিপদ বাড়ে।

তবে শুধু খোলামুখ খনি নয়, ভূগর্ভস্থ খনিতেও আগুন ধরে একাধিক বার বিপত্তি ঘটেছে। সাম্প্রতিক অতীতে কুনস্তোরিয়া, হরিপুরের মতো ভূগর্ভস্থ খনিতে আগুন ধরেছে। যদিও ভূগর্ভস্থ খনিতে অবৈধ খনন ছাড়া অন্য কারণেও আগুন ধরতে পারে। ভূগর্ভস্থ খনিতে কয়লা কাটার পরে কোনও ভাবেই কয়লা খনিতে ফেলে রাখা যায় না। যদি তা পড়ে থাকে, তবে সেই কয়লায় নিয়মিত রাসায়নিক ও জল ছেটাতে হয়। শ্রমিক নেতৃত্বের অভিযোগ, সেই কাজ করে না ইসিএল। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মাইনস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সম্পাদক তরুণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “খোলামুখ খনিতে কয়লা কেটে নেওয়ার পরে ফাঁকা জায়গায় মাটি ভরাট বা সম্ভব হলে জলাশয় তৈরি করা দরকার। কিন্তু ইসিএল-সহ কয়লা উত্তোলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন ঠিকা সংস্থা সেই কাজ করে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে ফের ওই জায়গাতেই কয়লা কাটে কয়লা চোরেরা।’’ যদিও ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের দাবি, ‘‘ইসিএল সব নিয়ম মেনেই কাজ করে।’’

বার বার অবৈধ খননের অভিযোগ সামনে আসার পরে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের ক্ষোভ, ‘‘শাসক দলের মদতে হয় এমনটা। প্রশাসন সব জেনেও নির্বিকার।’’ যদিও তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রবোধ রায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বিপত্তির শুরু তো সিপিএমের আমলেই। বাম আমলে যেখানে যেখানে অবৈধ খনন ঘটেছে, সেখানেই এমন বিপত্তি হচ্ছে।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (‌সেন্ট্রাল) অলোক মিত্র, ‘‘কোথাও কোনও অবৈধ খনন চলছে না। পুলিশ খবর পেলেই অভিযানে নামে।’’ যদিও চুরুলিয়ায় খনিচত্বরের পাহারার কাজ করা আনসার মণ্ডল ও শেখ বদরুলেরা বলেন, ‘‘দল বেঁধে এত মানুষ অবৈধ খনন করতে নামেন, আমাদের কিছু করার নেই।’’

তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ নম্বর ব্লক সভাপতি সাধন রায় জানান, চুরুলিয়ায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম দফতর খনি সম্প্রসারণ নিয়ে জমি জটিলতা রয়েছে। সেই জটিলতা কাটলেই ফের কয়লা উত্তোলন শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Mines ECL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE