Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

উজ্জ্বল-খুনে ধৃত দলেরই পাঁচ কর্মী

বিল্বগ্রামের তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে আঙুল তুলেছিলেন নিহতের পরিবার এবং অনুগামীরা। ওই ঘটনায় পুলিশ যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে, তাঁরা এলাকায় তৃণমূলকর্মী হিসাবেই পরিচিত। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বর্ধমানের সিজেএম ১০ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

ধৃতদের আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

ধৃতদের আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০২:৪৯
Share: Save:

বিল্বগ্রামের তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে আঙুল তুলেছিলেন নিহতের পরিবার এবং অনুগামীরা। ওই ঘটনায় পুলিশ যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে, তাঁরা এলাকায় তৃণমূলকর্মী হিসাবেই পরিচিত। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বর্ধমানের সিজেএম ১০ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বোমাও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বুধবার রাত ৮ টা নাগাদ আউশগ্রামের বনপাশ স্টেশন এলাকায় পিটিয়ে খুন করা হয় উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়কে (৫২)। তিনি ছিলেন তৃণমূলের বিল্বগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে উজ্জ্বলের ভাই সজল আউশগ্রাম থানায় ওই অঞ্চলেরই তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি জয়দেব মণ্ডল-সহ ১৪ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে সজল জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের কাছেই তাঁর দোকান। দাদা (উজ্জ্বল) চায়ের দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত ৮টা ১০ নাগাদ ৭টি মোটরবাইক দোকানের সামনে দাঁড়ায়। বাইক-আরোহীরা পরপর গুলি ছোড়ে। হাতে লাঠি, টাঙ্গি, শাবল, রড, তলোয়ার ছিল। সজলের কথায়, “চারিদিকে ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়। দোকান বন্ধ করে আমি লুকিয়ে পড়ি। সেখান থেকে দেখতে পাই, দাদাকে দোকান থেকে তুলে এনে ফাঁকা জায়গায় পেটাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। আমি রাস্তার আলোয় বেশ কয়েক জনকে চিনতে পেরেছি।’’

বিল্বগ্রামে উজ্জ্বলের বাড়ি ছাড়াও বনপাশ স্টেশন এলাকা-সহ ৭টি জায়গায় পুলিশ পিকেট রয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়ি ক্রমাগত এলাকা টহল দিচ্ছে। বিল্বগ্রামের লোকজন মনে করছেন, পরিকল্পিত ভাবেই উজ্জ্বলকে খুন করা হয়েছে। তিনি যে রোজ ওই চায়ের দোকানে যান, তা জানা ছিল আততায়ীদের। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হলেন পরেশ মাঝি, শেখ সাগর, মন্টু ঘোষ, কাশীনাথ ঘোষ ও সঞ্জীব হাটি। প্রত্যেকের বাড়ি বিল্বগ্রাম অঞ্চলেই। বাকি অভিযুক্তদের ধরার পুলিশ এ দিন ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে তল্লাশি চালায়। এ দিন কোর্ট চত্বরে পরেশ, কাশীনাথ দাবি করেন, ‘‘রাতে একটা মারপিট হয়েছিল। তবে আমরা কেউ ছিলাম না। আমরা তৃণমূল করি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হলাম।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এক সময় উজ্জ্বলেরই অনুগামী ছিলেন জয়দেব। গত কয়েক মাস ধরে পঞ্চায়েতের ‘দখলদারি’ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মতানৈক্য শুরু হয়। এরই মধ্যে আউশগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শেখ সালেক রহমান প্রতিটি পঞ্চায়েতে এক জন করে কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করেন। বিল্বগ্রাম অঞ্চলে জয়দেব ওই পদটি পাওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে উজ্জ্বলের দ্বন্দ্ব বাড়ে। গত ২৪ মে এই দু’জনের অনুগামীর মধ্যে মারপিটও হয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে ওই অঞ্চলে ৬ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে তাতেও মেটেনি, তা কার্যত মেনে নিয়ে আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার বলেন, “যত গন্ডগোল আউশগ্রাম ১ ব্লকে। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে গন্ডগোল মেটাব বলে ঠিক করেছি।’’

দলের এক নেতার কথায়, “পঞ্চায়েতের দখলদারি নিয়ে মূলত দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। অঞ্চল সভাপতির (উজ্জ্বল) কথাতেই দল টিকিট বিলি করেছিল। তখনও অস্বস্তিতে পড়েছিল জয়দেবর। এর মধ্যে দলের পর্যবেক্ষক কেষ্টদা (অনুব্রত মণ্ডল) প্রতিটি অঞ্চলে কার্যকরী সভাপতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই পদ বিলোপ করার জন্যেও নির্দেশ দেন।’’ কলকাতা থেকে তৃণমূলের আর এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার দাবি, “গত দু’তিন মাস ধরে জয়দেব বিল্বগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি হওয়ার জন্য তদ্বির করছিলেন। কেষ্টর কাছে তা পাঠানো হয়েছিল। সে সাফ জানিয়েছিল, সামনেই লোকসভা ভোট। এখন সভাপতি বদল করা হবে না।’’

এ দিন মূল অভিযুক্ত জয়দেব মণ্ডলের বাড়ি ভাদা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা হলুদ রঙের বাড়িটি তালা বন্ধ হয়ে রয়েছে। পড়শিরা কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। তাঁরা শুধু জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকে বাড়ি তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে। এ দিন জয়দেবের মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও লাইন পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE