Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অন্ডালে উড়ান নাকি এক মাসে, ঘোষণা ঘিরে বহু প্রশ্ন

পরীক্ষা শেষ। ফল বেরোনোর অপেক্ষা। ‘ধরে নেওয়া হচ্ছে’ এক মাসের মধ্যে যাত্রী বিমান উড়তে শুরু করবে অন্ডাল থেকে। যাদের উপরে ভরসা করে আগাম এই ঘোষণা, সেই ‘পিনাকল এয়ার’ আদতে দিল্লির একটি সংস্থা। ছোট বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়। জেট-ইন্ডিগোর মতো নিয়মিত যাত্রী পরিষেবা নেই। ছোট রুটে বরাত পেলে ছোট বিমান চালায়।

পরীক্ষামূলক ভাবে বিমান চালানোর পর সাংবাদিক বৈঠক। (বাঁ দিক থেকে) রিজিওনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি, বিমানবন্দরের এমডি পার্থ ঘোষ, মন্ত্রী মলয় ঘটক ও রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

পরীক্ষামূলক ভাবে বিমান চালানোর পর সাংবাদিক বৈঠক। (বাঁ দিক থেকে) রিজিওনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি, বিমানবন্দরের এমডি পার্থ ঘোষ, মন্ত্রী মলয় ঘটক ও রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

সুনন্দ ঘোষ
অন্ডাল শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

পরীক্ষা শেষ। ফল বেরোনোর অপেক্ষা। ‘ধরে নেওয়া হচ্ছে’ এক মাসের মধ্যে যাত্রী বিমান উড়তে শুরু করবে অন্ডাল থেকে।

যাদের উপরে ভরসা করে আগাম এই ঘোষণা, সেই ‘পিনাকল এয়ার’ আদতে দিল্লির একটি সংস্থা। ছোট বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়। জেট-ইন্ডিগোর মতো নিয়মিত যাত্রী পরিষেবা নেই। ছোট রুটে বরাত পেলে ছোট বিমান চালায়।

তাদের ৯ আসনের ছোট সেসনা বিমান রয়েছে কলকাতায়। যাত্রী পেলে জামশেদপুর যাতায়াত করে। অন্ডালের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে ১৭ আসনের বিমান নিয়ে। সোমবার অন্ডালে পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, পিনাকল যাত্রী বিমান চালাবে কলকাতা-অন্ডাল- কোচবিহার-বাগডোগরা রুটে। এবং ‘ধরে নেওয়া হচ্ছে’ তা চালানো হবে এক মাসের মধ্যেই। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি এই বিমানবন্দরের এমডি পার্থ ঘোষও দাবি করেছেন, পয়লা বৈশাখের কাছাকাছি শুরু হবে যাত্রী বিমান। বলা হয়েছে, সপ্তাহে চার দিন এই উড়ান চলবে। যার মধ্যে দু’দিন রাতে বাগডোগরা থেকে উড়ে অন্ডাল ঘুরে কলকাতায় যাবে। তাতে বাগডোগরায় রাতে বিমান ওঠানামার যে সুবিধা তৈরি করা হয়েছে, তা-ও ব্যবহার করা যাবে।

পিনাকল এয়ারের অপারেশন ইনচার্জ ক্যাপ্টেন সন্দীপ শরাফ জানাচ্ছেন, ১৭ আসনের ডর্নিয়ার ২২৮ বা চেক প্রজাতন্ত্রের বিমান নির্মাতা সংস্থা থেকে এল ৪১০ বিমান দু’টি এখনও হাতেই আসেনি তাদের। অন্ডালে ওই বিমান চালানোর কথা হয়েছে। কমপক্ষে তিন মাস লাগবে তা হাতে আসতে। তার পরে ভারতে সেই বিমান চালানোর অনুমতি নিতে হবে। শরাফের কথায়, “সব ঠিকঠাক চললে অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে সেই উড়ান।”

তবে যে বলা হল পয়লা বৈশাখ?

শরাফ মনে করছেন, হতে পারে অন্ডাল বিমানবন্দর লাইসেন্স পেয়ে গেলে কলকাতায় থাকা ৯ আসনের বিমান দিয়ে শুরু হবে যাত্রা। তাতেও দু’টি সমস্যা রয়েছে। এক, কলকাতা-অন্ডালে এত দিন ধরে হেলিকপ্টার চালিয়েই ভাল যাত্রী পাওয়া যায়নি। ছোট বিমান চালিয়ে কত যাত্রী পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কলকাতা-অন্ডাল-কোচবিহার-বাগডোগরা রুটে ওই ছোট বিমান চালিয়ে আদৌ আর্থিক সাফল্য আসবে কি না সে প্রশ্ন রয়েছে। দুই, এই বিমানটি এক ইঞ্জিনের। এবং এক ইঞ্জিনের বিমান বা হেলিকপ্টার নিয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

এ তো গেল পিনাকল-কথা। পার্থবাবুর দাবি, গো, ইন্ডিগোর সঙ্গে কথা অনেকটাই এগিয়েছে। তাঁর কথায়, “একটি সংস্থা বা দু’টি, কাল থেকে এক মাসের মধ্যে দিল্লি-অন্ডাল উড়ান তো হবেই।” গো এয়ার আপাতত দেশের ২২ শহর থেকে উড়ান চালাচ্ছে ১৯টি বিমান নিয়ে। তারই একটিকে তুলে এনে কী ভাবে দিল্লি-অন্ডাল রুটে চালানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে, সংস্থার এক কর্তার কথাতেও বিম্য়সের ছোঁয়া, “এক মাস! দেখাই যাক!”


অন্ডালের আকাশে।

আর ইন্ডিগো? সংস্থাটির কর্তা বললেন, “চাঙ্গি (অন্ডালের বেসরকারি বিমানবন্দরের ৩৬.২% শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরের এই সংস্থা) খুব চেষ্টা করছে। দিল্লিতে আমাদের মার্কেটিং-এর লোকেদের সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু, অন্ডাল থেকে বিমান চালিয়ে আমাদের খুব একটা সুবিধে হবে বলে তো মনে হচ্ছে না।”

পার্থ ঘোষ আরও দু’টি বিমানসংস্থার নাম করেছেন। এক, এয়ার ইন্ডিয়া। দুই, এয়ার কোস্টা। দ্বিতীয় এই সংস্থাটি পিনাকল-এর মতোই, নিয়মিত যাত্রী পরিষেবা দেয় না। পার্থবাবুর দাবি, তারা অন্ডাল থেকে সপ্তাহে চার দিন হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুও যেতে পারে। অন্ডাল থেকে কী আপনারা বিমান চালাচ্ছেন? এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তা বলেছেন, “এ রকম কোনও তথ্য আমার জানা নেই।” এয়ার কোস্টার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

তবে, এ দিন বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষকে নিয়ে গিয়ে হাজির করা হয়েছিল অন্ডালে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি, ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ), এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র অফিসার এসেছিলেন অন্ডালে। ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। সবাই আশাবাদী। যাত্রী বিমান চালু হলে সুবিধা হবে সকলেরই।

কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে এই বিষয়ে ফোনে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। গডকড়ী বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে আমি সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। যে নতুন বিমানবন্দরটি চালু হচ্ছে, তা রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নের দিক থেকে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি হলে আসানসোল-দুর্গাপুরে গোটা অঞ্চলটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আসবে।”

গত তিন দিন ধরে দিল্লি থেকে বিমান মন্ত্রকের নিজস্ব একটি ছোট বিচক্র্যাফ্ট বিমান অন্ডালের আকাশে উড়ে, সেখান থেকে ওঠানামা করে সেখানে বসানো সব যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই বিমানের পাইলট ও ইঞ্জিনিয়াররা ডিজিসিএ-এর কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। সূত্রের খবর, এই রিপোর্ট ডিজিসিএ-র হাতে পৌঁছতে কয়েক দিন সময় লাগবে। সেই রিপোর্ট দেখে ডিজিসিএ কর্তারা সন্তুষ্ট হলে তবে সেখান থেকে একটি বিশেষজ্ঞ জল আসবে অন্ডালে। তাঁরা নিজেরা পরীক্ষা করবেন। তাঁরা সেই পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হলে ফিরে গিয়ে সেই রকম একটি রিপোর্ট জমা দেবেন। তার পরে মিলবে চুড়ান্ত ছাড়পত্র।

আলাপনবাবুর কথায়, “ধরে নেওয়া হচ্ছে এক মাসের মধ্যে এই বিমানবন্দর থেকে যাত্রী উড়ান শুরু হয়ে যাবে।” ডিজিসিএ-র কর্তার কথায়, “কম করেও এক মাস লাগবে ঠিকই, কিন্তু, যত ক্ষণ না পর্যন্ত লাইসেন্স হাতে আসছে তত ক্ষণ পরিষ্কার করে কিছু বলা মুশকিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE