Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফড়ে রুখতে রোজ হিসেব

বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার সভাঘরে জেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এ দিনই সকালে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব ধান কেনার প্রক্রিয়া দেখতে জেলা কৃষি খামারে গেলে চাষিরা খাদ বাদ দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ দেখান।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৮
Share: Save:

কোন চাষির কাছ থেকে কত ধান কেনা হল, প্রতি দিন তার তালিকা পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির কাছে পাঠিয়ে দেবে খাদ্য দফতর। ফড়ে রুখতে এমনই ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার সভাঘরে জেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এ দিনই সকালে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব ধান কেনার প্রক্রিয়া দেখতে জেলা কৃষি খামারে গেলে চাষিরা খাদ বাদ দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ দেখান। জেলাশাসক বলেন, ‘‘বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কোন চাষি কত ধান সহায়ক মূল্যে বিক্রি করলেন প্রতিদিন তার তালিকা পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে পাঠানো হবে। ইচ্ছা করলে তারা ওই তালিকা প্রকাশ্যে টাঙিয়ে রাখতে পারে।’’

গত সোমবার জেলা পরিষদের সঙ্গে চালকল মালিকদের একটি বৈঠকে ঠিক হয়, প্রতি বস্তায় (৬০ কেজি) সর্বোচ্চ তিন কেজি খাদ বাদ দেওয়া যাবে। এ দিন সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চালকল সমিতির সদস্যরা ফড়েদের উৎপাতের অভিযোগে সরব হন। তাঁদের দাবি, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর থেকে কম দামে ধান কিনে এনে ফড়েরা প্রান্তিক চাষির নামে কিসান মান্ডিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রায়না-সহ বেশ কয়েকটি জায়গার চালকলকে কিনতে বাধ্য করছেন। চালকল মালিক সমিতির রাজ্য কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেকের দাবি, ‘‘বৈঠক চলাকালীনই একটি চালকলে ফড়েরা ৯০ কুইন্টাল ধান নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ করা হয়েছে। আমাদের দাবি মেনে এ দিনই রাজ্যে খাদ্য কমিশনার চাষিদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ কুইন্টাল ধান কেনার নির্দেশ জারি করেছেন।’’

কালনা, গলসির মতো বেশ কিছু ব্লকে টোকেন বিলি নিয়ে দুর্নীতিরও অভিযোগ ওঠে বৈঠকে। গলসির রামগোপালপুরের একটি সমবায়ের কয়েকজন সদস্য সম্প্রতি বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছিলেন, সমবায়ের কর্তারা ফড়েদের হাতে টোকেন বিক্রি করে দিচ্ছেন। জোর কের সই করিয়ে পাঁচশো বস্তার টোকেন বিক্রি করা হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। ধান কেনা বন্ধ রাখারও দাবি জানান তাঁরা। সূত্রের খবর, বৈঠকে জেলার মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন এ রকম দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। জনপ্রতিনিধিদের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে ‘ফড়ে’দের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার কথাও বলেন তিনি। সতর্ক করা হয় চালকল মালিকদেরও। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার একটি চালকল ইতিমধ্যে এত বস্তা ধান কিনে ফেলেছে যে রাখার জায়গা নেই। আবার ধান নেওয়ার পর চাষিদের বস্তা ফিরিয়ে দেওয়া নিয়েও গড়িমসির অভিযোগ ওঠে চালকলের বিরুদ্ধে। আবার বস্তা ফেরালেও তা খুবই নিম্নমানের বলে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন চাষিরা। এ দিন বৈঠকের বর্ধমান চালকল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রাজকুমার সাহানার দাবি, প্রতিটি চালকল মালিকের কাছে প্রশাসনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এ জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টন। এখনও পর্যন্ত ধান কেনা হয়েছে ১ লক্ষ ২৮ হাজার টন। অথচ সব চালকল এখনও খাদ্য দফতরের সঙ্গে ধান ভাঙানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়নি বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা শাসক এ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন। আব্দুল মালেকের দাবি, ‘‘১৩৪টি চালকল চুক্তি করেছে। এখনও ৬১টি চালকল চুক্তি করেনি। এ মাসের মধ্যেই তাঁরা চুক্তিবদ্ধ হবেন বলে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE