মেমারির নবস্থায় এক চালকলে চলছে ধান কেনা। ছবি: উদিত সিংহ
চাষিদের কাছ থেকে ৯০ কুইন্টালের বদলে সর্বোচ্চ ৪৫ কুইন্টাল ধান কেনার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিতে চলেছে খাদ্য দফতর। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে যেমন বেশি চাষির কাছে ধান কেনা যাবে, তেমনই ফড়েদের উৎপাত ঠেকানো যাবে বলে মনে করছেন দফতরের আধিকারিকেরা। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘খাদ্য দফতর এই প্রস্তাব তৈরি করে মুখ্য সচিবের কাছে পাঠাবে। তিনি ওই প্রস্তাব দিল্লি থেকে মুখ্যমন্ত্রী ফিরে এলে জমা দেবেন।’’
মাসখানেক ধান কেনার পরে হঠাৎ এই রকম প্রস্তাবের কারণ কী? খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মঙ্গলকোট-সহ বেশ কিছু এলাকায় চাষিরা সহায়ক মূল্যে বিক্রি করতে ৩০ কুইন্টালের বেশি ধান আনছেন না। আমি নিজে গিয়ে তা দেখেছি। সে জন্যই এই প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তা সমর্থন জানিয়ে রাজ্য চালকল মালিক সমিতির মুখপাত্র আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘এর ফলে বেশি চাষির কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা যাবে। চালকলে ধান রাখতে গিয়ে জায়গার অভাবও হবে না।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গ ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক বিশ্বজিৎ মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘সহায়ক মূল্য ও খোলা বাজারের দামের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে না পারলে দিনের শেষে সরকারই কিন্তু ধান কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়বে।’’
খাদ্য দফতরের কর্তারা মনে করছেন, ৯০ কুইন্টাল বা ১৫০ বস্তা ধান উৎপাদন করার জন্য এক জন চাষির অন্তত ১০ বিঘা জমি প্রয়োজন। এ রাজ্যে ১০ বিঘা জমির মালিককে ‘প্রান্তিক’ চাষি বলা যায় না। আবার, পূর্ব বর্ধমানের রায়না, আউশগ্রাম-সহ নানা এলাকায় দেখা যাচ্ছে, সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে না পেরে বড় চাষি বা ফড়েদের কাছে খোলা বাজারের চেয়ে ১০০-১৫০ টাকা বেশি দরে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক চাষি। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মঙ্গলকোটে ফড়েরা ধান সংগ্রহ কেন্দ্রের সামনে গোলমাল পাকাচ্ছে। সরকারি কর্তাকে হুমকি দিয়ে এক সঙ্গে বেশি ধান কিনতে চাপ দিয়েছে।’’ তিনি জানান, ধান সংগ্রহ কেন্দ্রগুলির সামনে ফড়েদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
শুধু পুলিশ নয়, খাদ্য দফতরও বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে মোট ২০টি ভিজিল্যান্স দলকে মাঠে নামিয়েছে। তারা বিভিন্ন ধান সংগ্রহ কেন্দ্রে চাষিদের সম্বন্ধে বিশদ তথ্য নেবে। কোনও চাষির তথ্য ‘অস্বাভাবিক’ ঠেকলে তারা সোজা গ্রামে গিয়ে কথা বলবে। খাদ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এর ফলে চাষির রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে ফড়েরা ধান বিক্রি করতে ভয় পাবেন।’’
যদিও এ ভাবে ফড়েদের ঠেকানো যাবে না বলে দাবি কৃষকসভার। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, ‘‘ধান কেনার উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। পুরোটাই ফড়েদের রাজত্ব। তাদের রক্ষা করার জন্য নানা নিয়মনীতি বার করছে। অভাবি ধান কেনার কোনও পরিকাঠামোই এ রাজ্যে এখন নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy