Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গ্যাস লিক করে অসুস্থ ডিএসপি-র তিন কর্মী

গ্যাস লিক করে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিন কর্মী। শুক্রবার সকালে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছে়ড়ে দেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

গ্যাস লিক করে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিন কর্মী। শুক্রবার সকালে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছে়ড়ে দেওয়া হয়। কী ভাবে ঘটনাটি ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান।

ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে কারখানার ব্লাস্ট ফার্নেসে। কর্মীদের অভিযোগ, ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে গ্যাস বেরোয়। ওই বিভাগের ৩ নম্বর কন্ট্রোল রুমের জয়ন্তনারায়ণ হাজরা-সহ দু’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। জয়ন্তনারায়ণবাবুকে ডিএসপি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় অন্য জনকে। কিছুক্ষণ পরে ‘র মেটিরিয়াল হ্যান্ডেলিং প্ল্যান্ট’ (আরএমএইচপি) বিভাগের কর্মী বিদ্যুৎকুমার ঘোষও অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক ভাবে তিনিও গ্যাস থেকেই অসুস্থ হন বলে অনুমান। তাঁকেও ভর্তি করানো হয় ডিএসপি হাসপাতালে।

কারখানা সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ব্লাস্ট ফার্নেস গ্যাস বেরিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিন কর্মী। বিষাক্ত ব্লাস্ট ফার্নেস গ্যাসে নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সিজেন থাকে। কোনও গন্ধ না থাকায় আগাম আঁচ করা যায় না। কার্বন মনোক্সাইডে সমস্যা হয়।

ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসের কাছে ‘ওয়াটার সিল’ আছে। সেখানে কিছু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। ব্লাস্ট ফার্নেস গ্যাস ওই সিলে বাধা পেয়ে অল্প পরিমাণে একটি নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে বেরিয়ে যায়। বেরনোর সময়ে সেটি পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এ দিন গ্যাস বেরনোর পরিমাণ হঠাৎ এত বেড়ে যায় যে আগুন নিভে যায়। ব্লাস্ট ফার্নেস গ্যাস বাতাসের থেকে ভারী হওয়ায় তা নীচে থিতিয়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। সেই গ্যাস থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিন জন কর্মী।

সিটু নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই ব্লাস্ট ফার্নেস অঞ্চলে গ্যাস লিকের ঘটনা ঘটছে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে ২ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসে গ্যাস লিক করে ২৫ জন কর্মী গুরুতর অসুস্থ হন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসে গ্যাস লিক করে মৃত্যু হয় দুই কর্মীর। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ২ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে গ্যাস বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ছ’জন। সিটুর দাবি, কারখানা পুরনো হচ্ছে। তাই নিয়মিত পরিদর্শন ও মেরামতি জরুরি।

কারখানার ‘স্ট্রাকচারাল ইনস্পেকশন’ বিভাগ এখন চালু নেই। সিটু প্রভাবিত ‘হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর ডিএসপি-র যুগ্ম সম্পাদক সৌরভ দত্তের বক্তব্য, ‘‘ওই বিভাগের প্রয়োজনীয়তা দিন-দিন বাড়ছে। তা ছাড়া প্রত্যেক বিভাগে কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে নিরাপত্তা কমিটি গড়া দরকার। কেন্দ্রীয় ভাবে একটি কমিটি গঠনের প্রয়াস চলছে। তবে সেখানে শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রতিনিধি রাখা হবে না বলে আমাদের আশঙ্কা। এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে ভবিষ্যতে বড় বিপদ ঘটবে।’’ আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, ‘‘শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি দুর্ঘটনার ফলে প্রকট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে শ্রমিকদের।’’

ডিএসপি কর্তৃপক্ষ জানান, কী ভাবে গ্যাস লিকের ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Gas Leakage Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE