প্রতীকী চিত্র।
প্রার্থী হয়েও আইনি জটিলতায় নিজের জেলা বাঁকুড়ায় প্রচারে যেতে পারেননি। দিতে পারেননি নিজের ভোটও। তার পরেও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ কী ভাবে জিতলেন, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
গতবার তৃণমূল থেকে বিষ্ণুপুরের সাংসদ হলেও জানুয়ারিতে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বহিষ্কৃত হন সৌমিত্র। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে নানা মামলায় জড়ান তিনি। বিজেপি ফের তাঁকে বিষ্ণুপুরের প্রার্থী করলেও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় তিনি বাঁকুড়া জেলায় প্রচারে ঢুকতে পারেননি।
সৌমিত্রর প্রচার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের মধ্যে শুধু পূর্ব বর্ধমান খণ্ডঘোষ বিধানসভাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাকি ছ’টি বিধানসভা এলাকায় প্রচারে নামেন তাঁর স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী সুজাতা খাঁ। গ্রামে-গ্রামে গিয়ে স্বামীকে জেতানোর জন্য ভোট চেয়েছেন। ভোটের পরেও স্ট্রং রুমে নজরদারি করা থেকে শুরু করে গণনার সময় পর্যন্ত এলাকায় থেকেছেন।
এ দিন জয়ের পরে সৌমিত্র বলেন, ‘‘খণ্ডঘোষে আমি প্রচারে গিয়েছি। কিন্তু কম ভোট পেয়েছি। আমার স্ত্রী রাজনীতিতে নবাগতা হলেও মানুষের মন জয় করে বাকি ছ’টি বিধানসভাতেই আমাকে লিড দিয়েছে। সুজাতা জিতে গিয়েছে।’’ আর সুজাতা বলেন, ‘‘স্বামীকে অপবাদ-মুক্ত করতে যতটা পেরেছি লড়াই করেছি।’’
দুর্গাপুরের হোটেলে গত কয়েকদিন ধরে ঠাঁই নেওয়া সৌমিত্র জানান, অন্তত পাঁচশো বুথে গোলমালের আশঙ্কায় বুধবার রাতটা তাঁর উদ্বেগে কেটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে সাদা পাজামা ও নীল টি-শার্ট পরেই বসে গিয়েছিলেন টিভির সামনে। গণনার শুরু থেকেই তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরার থেকে এগোতে থাকেন তিনি। তবু দুশ্চিন্তার কাঁটা খচখচ করছিল।
সকাল ১১ টা নাগাদ ঘরে ঢোকেন দুর্গাপুরের বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনটি মোবাইল ফোনে গণনার খবর নেওয়ার পাঁকে সৌমিত্র তাঁকে বলে ওঠেন, ‘‘ব্যবধান কমে যাচ্ছে। টেনশন হচ্ছে।’’ অমিতাভবাবু অবশ্য হিসেব কষে দেখিয়ে দিলেন, ব্যবধান কমেনি, বরং ১০ হাজার বেড়েছে।
দুপুর সওয়া ১২ টা নাগাদ ব্যবধান ছাড়িয়ে যায় প্রায় ৪৮ হাজার। বিজেপি কর্মী অসীম প্রামাণিক বললেন, ‘‘এ বার তো একটু হাসো দাদা!’’ সৌমিত্র বললেন, ‘‘বুঝতে পারছ না। এখনও কোতুলপুর ঢোকেনি। ওদিকে খণ্ডঘোষ রয়েছে, পাত্রসায়র রয়েছে। খারাপ ফল হতে পারে এমন প্রায় ১২০টা বুথ রয়েছে।’’ বিকাল ৩ টা নাগাদ, ব্যবধান ৫০ হাজার ছাড়ানোর পরেও বলেন, ‘‘এখনও টেনশনে আছি দাদা। খুব আপ-ডাউন হচ্ছে।’’
সঙ্গীদেরও উচ্ছ্বাস প্রকাশে নিষেধ করছিলেন। বিকেল নাগাদ জয়ের ব্যবধান ৭০ হাজার ছাড়ানোর খবর পেতেই অবশ্য খুশির বাঁধ ভাঙে। দলের এক কর্মীকে জড়িয়ে বলে ওঠেন, ‘‘এ বার আনন্দ কর। আর চিন্তা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy