Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছাড়বেন মেয়র পদ, হেরে দাবি জিতেন্দ্রর

এ দিন সকালে গণনা শুরুর আগেই কেন্দ্রে পৌঁছে যান জিতেন্দ্রবাবু। শেষ পর্যন্ত ছিলেন তিনি।

গণনাকেন্দ্রে আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ছবি: পাপন চৌধুরী

গণনাকেন্দ্রে আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ছবি: পাপন চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে হারের স্মৃতি মুছে ফেলার ‘চ্যালেঞ্জ’ ছিল তাঁদের সামনে। গত বারের পুনরাবৃত্তি এ বার আর হবে না, প্রচার-পর্বে দাবিও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই স্মৃতি মুছে ফেলা তো দূর, এ বার আরও বড় হারের মুখে পড়তে হল দলকে। বৃহস্পতিবার গণনা এগোনোর সঙ্গে-সঙ্গে তাই গম্ভীর হল আসানসোলের তৃণমূল নেতাদের মুখ। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করবেন, জানালেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি।

আগের বার তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের হারের পরে মন্ত্রিত্ব গিয়েছিল আসানসোলের তৃণমূল নেতা মলয় ঘটকের। পরে অবশ্য তা ফেরত পান তিনি। দলের অন্দরে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল অন্য কয়েকজন নেতার ভূমিকাও। ২০১৫ সালে পুরভোট ও ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে এলাকায় ভাল ফলের পরে স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলেন তাঁরা। এ বার মুনমুন সেন প্রার্থী হওয়ার পরে সভা-বৈঠকে এক সঙ্গে দেখাও গিয়েছে নেতাদের। তার পরেও শেষরক্ষা হল না।

এ দিন সকালে গণনা শুরুর আগেই কেন্দ্রে পৌঁছে যান জিতেন্দ্রবাবু। শেষ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্রবাবু দলের তরফে সেই এলাকার গণনার দায়িত্বে ছিলেন। পাণ্ডবেশ্বরে তৃণমূল প্রায় ছ’হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ে। ভোটের আগে জিতেন্দ্রবাবু দাবি করেছিলেন, দলের প্রার্থীকে জেতাতে না পারলে তিনি মেয়র পদ ছেড়ে দেবেন। যে যেমন ‘লিড’ দিতে পারবেন, সেই অনুযায়ী এলাকায় উন্নয়নের টাকা পাবেন বলে দলের কাউন্সিলরদের হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। তৃণমূলকে ভোট দিয়ে হিন্দিভাষীদের ‘বদনাম’ ঘোচানোর ডাকও দিয়েছিলেন তিনি। এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘আমি কালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেব।’’ উন্নয়নের টাকা দেওয়া বা হিন্দিভাষীদের বার্তা দেওয়ার বিষয়ে এ দিন আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

দুপুরে পৌনে ১টা নাগাদ যখন তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন গণনা কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময়ে সেখানে আসেন দলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন। তখন দল বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে। শিবদাসন বলেন, ‘‘দলে এমন অনেকে আছেন যাঁদের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মানুষ আমাদের ভোট দেননি, তা মেনে নিতে হবে। এই ফল নিয়ে পর্যালোচনা করব।’’ এই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছে প্রায় ছ’লক্ষ ৩৩ হাজার ভোট। তৃণমূল চার লক্ষ ৩৫ হাজার ভোট।

সকাল থেকে গণনা কেন্দ্রের বাইরে কর্মীদের সঙ্গে দলের শিবিরে বসেছিলেন কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। ২০১৪ সালে তাঁর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। এ বার তাই কুলটির উপরে বিশেষ নজর ছিল দলীয় নেতৃত্বের। উজ্জ্বলবাবু দাবি করেছিলেন, এ বার আর আগের ভরাডুবি হবে না। কিন্তু এ দিন দেখা যায়, বিজেপি কুলটি থেকে প্রায় ৪৯ হাজার ভোটে ‘লিড’ পেয়েছে, যা গত বারের চেয়েও বেশি। উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘আমি এ বার প্রচুর পরিশ্রম করেছিলাম। কেন এমন হল, বুঝতে পারছি না।’’

এ বার আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার, আসানসোল দক্ষিণে প্রায় ৫৩ হাজার ও বারবনিতে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। এ দিন গণনাকেন্দ্রে দেখা যায়নি ওই তিন এলাকার বিধায়ক মলয় ঘটক, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বা বিধান উপাধ্যায়কে। তাঁদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE