Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভূগর্ভস্থ জল তোলা নিয়ে বাড়ছে চিন্তা

কোনও অনুমতি ছাড়াই মাটির তলা থেকে জল তোলার অভিযোগ ইতিমধ্যে উঠেছে জেলায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভা অঞ্চলে এই অভিযোগ বেশি।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৬
Share: Save:

বিপজ্জনক বা আংশিক বিপজ্জনকের তালিকায় নাম ওঠেনি জেলার কোনও ব্লকের। তবু ভূগর্ভস্থ জলস্তরের মাত্রা নিয়ে নিশ্চিন্ত নয় পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। মাটির তলা থেকে জল তোলা বন্ধ করতে পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকায় নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি। সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি ছাড়া ভূগর্ভের জল তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কোনও অনুমতি ছাড়াই মাটির তলা থেকে জল তোলার অভিযোগ ইতিমধ্যে উঠেছে জেলায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভা অঞ্চলে এই অভিযোগ বেশি। আসানসোল পুরসভা জল দফতরের তত্ত্বাবধানে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করেছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রবণতা রুখতে ২৭ সেপ্টেম্বর জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি একটি বৈঠক করেন। বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানান।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিল্প সংস্থা, বহুতল আবাসন, বড় হোটেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাধারণত মাটির তলার জল ব্যবহার হয়। জেলাশাসক জানান, যে সব সংস্থা, বহুতল বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অনুমতি ছাড়া ভূগর্ভের জল তুলছে, সেগুলির তালিকা তৈরি হবে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তাদের অনুমতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি ২৫টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।’’ ‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট’ (সুইড)-এর এক আধিকারিক জানান, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় মাটির তলার কয়লা কেটে নেওয়ার পরে ভূগর্ভ ফাঁপা হওয়ায় জলের স্তর এমনিতেই নেমে গিয়েছে। তাই এই অঞ্চলে লাল সতর্কতা জারি না হলেও বাসিন্দাদের সতর্ক থাকা উচিত। জেলাশাসক জানান, জন-সচেতনতা প্রচারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বণিক সংগঠন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে জল অপচয় বন্ধ ও ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টির জল সংরক্ষণেও জোর দেওয়া হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর শহর লাগোয়া ফরিদপুর ব্লকের শঙ্করপুর, কালীগঞ্জ, টেটিখোলা বা কাঁকসা ব্লকের আড়রা, বামুনাড়ার মতো এলাকায় নানা নতুন বহুতল তৈরি হচ্ছে। অভিযোগ, নির্মাণকাজ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল তুলে। তা ছাড়াও আবাসন হস্তান্তরের পরে আবাসিকদের ভরসা সেই মাটির তলার জল। আশপাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে পুকুরের জলস্তর নেমে যাচ্ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে কুয়ো। তাঁদের দাবি, গত কয়েক বছরে কয়েকশো পাম্প বসেছে এলাকায়। সাবমার্সিবল পাম্পে জল তোলা হচ্ছে।

বিভিন্ন আবাসন নির্মাতাদের যদিও দাবি, প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই পাম্প বসানো হয়েছে। বাসিন্দাদের পাল্টা অভিযোগ, যাঁরা পাম্প বসানোর অনুমতি নিয়েছেন তাঁরা বেআইনি ভাবে বেশি পাম্প বসিয়েছেন। নানা কারখানাতেও বেআইনি ভাবে মাটির নীচের জল তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন জানায়, একাধিক বার অভিযান চালিয়ে পাম্প বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে আবাসন নির্মাতাদের। আবাসন নির্মাতাদের জলের উৎস সম্পর্কে বিশ তথ্য ও নথিপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আসানসোল পুরসভার সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সুকোমল মণ্ডল জানান, গত কয়েক বছরে পুরসভার বিভিন্ন প্রান্তে হাজার সাতেক বহুতল আবাসন হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটিরই জলের উৎস ভূগর্ভস্থ জল। সেগুলির অধিকাংশেরই অনুমতি নেই। তিনি জানান, জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এই আবাসনগুলিতে অভিযান চালানো হবে। নিয়ম মেনে আবেদন করার নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, আবাসনের বাসিন্দাদের জানাতে হবে দৈনিক তাঁরা কতটা জল মাটির তলা থেকে তুলবেন। তার বেশি জল তোলা হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুকোমলবাবুর দাবি, পুরসভার ১০৬টি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জল সরবরাহের জন্য কয়েকশো কোটি টাকায় নানা জলপ্রকল্প তৈরি হচ্ছে। তাই বাসিন্দাদের ভূগর্ভস্থ জল তোলার প্রয়োজন হবে না। তার পরেও দরকার হলে আবাসনগুলিতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা সরেজমিনে দেখার পরেই ভূগর্ভস্থ জল তোলার অনুমতি দেওয়া হবে। পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায় বলেন, ‘‘নিয়ম ভাঙলে আবাসনগুলির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Groundwater Paschim Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE