Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কন্যাশ্রীর পোস্টারে ফুটবল পায়ে দুই মেয়ে

বিশ্বকাপের মরসুমে ফুটবল পায়েই কন্যাশ্রীর পোস্টারে জায়গা করে নিল গুসকরার দুই মেয়ে।এর আগেও কেউ বিয়ে রুখে, কেউ খেলাধুলো বা অন্য বাধা টপকে কন্যাশ্রীর পোস্টারে জায়গা পেয়েছে। সেই দলে নাম লেখাল গুসকরা বালিকা বিদ্যালয়ের অনন্যা মিস্ত্রি এবং গুসকরা পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের অঞ্জলি বিশ্বাস।

অঞ্জলি ও অনন্যা। নিজস্ব চিত্র

অঞ্জলি ও অনন্যা। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
গুসকরা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

বিশ্বকাপের মরসুমে ফুটবল পায়েই কন্যাশ্রীর পোস্টারে জায়গা করে নিল গুসকরার দুই মেয়ে।

এর আগেও কেউ বিয়ে রুখে, কেউ খেলাধুলো বা অন্য বাধা টপকে কন্যাশ্রীর পোস্টারে জায়গা পেয়েছে। সেই দলে নাম লেখাল গুসকরা বালিকা বিদ্যালয়ের অনন্যা মিস্ত্রি এবং গুসকরা পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের অঞ্জলি বিশ্বাস। দু’জনেই দশম শ্রেণির ছাত্রী।

অঞ্জলির বাড়ি গুসকরা থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে সরুলিয়ায়। সেখান থেকে রোজ সাইকেলে করে স্কুলে আসে সে। স্কুল শেষে গুসকরা কলেজ মাঠে ফুটবল অনুশীলন সেরে বাড়ি ফেরে। অঞ্জলির মা অনিমা বিশ্বাস বলেন, “প্রথমে খেলার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি থাকলেও এখন মেয়ের জন্য গর্ব হয়। ও দিল্লিতে খেলতে যাচ্ছে। খেলার জন্যে ওর ছবি ছাপা হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে।” অঞ্জলির বাবা প্রফুল্ল বিশ্বাস দিনমজুর। তিনি জানান, আর্থিক অনটনের জন্য এক ছেলেকে অষ্টম শ্রেণিতেই পড়া ছেড়ে দিতে হয়। অঞ্জলির খেলা, পড়ার খরচও কোথা থেকে আসবে জানেন না তাঁরা। তার মধ্যেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।

গুসকরা শহরের শান্তিপুরের অনন্যা মিস্ত্রিরা চার বোন। সব থেকে ছোট অনন্যা। তিনি জানান, ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি খুব ঝোঁক। প্রথম দিকে পাড়ার মাঠেই ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলতেন। তবে নিয়মিত অনুশীলন শুরু হয় বছর দুয়েক আগে থেকে। অনন্যা জানান, “বাবা খুব ভালো ফুটবল খেলতেন। তিনিই আমাকে ছোটো থেকে ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করেন।” পেশায় গুঁড়ো মশলা বিক্রেতা অনন্যার বাবা তারক মিস্ত্রি বলেন, “মেয়ে একদিন ভালো ফুটবলার হবে সবসময় এই স্বপ্নই দেখি। তাই আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও ওকে খেলার জন্য প্রেরণা দিই।’’

আগের বছরেও গুসকরা বালিকা বিদ্যালয়ের সুস্মিতা রায় কিক বক্সিং খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়ে কন্যাশ্রী পোস্টারে জায়গা পেয়েছিলেন। পরপর দু’বছর বিদ্যালয়ের ছাত্রী কন্যাশ্রী পোস্টারে জায়গা পাওয়ায় খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা।

অনন্যা এবং অঞ্জলি দু’জনেই গুসকরা মিউনিসিপ্যাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহিলা ফুটবল দলের সদস্য। সেখানেই তাঁরা নিয়মিত অনুশীলন করে। অঞ্জলি ডিফেন্সে এবং অনন্যা স্ট্রাইকার পজিশনে খেলেন। সম্প্রতি দিল্লিতে আয়োজিত প্রথম ‘খেলো ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় অনুর্ধ্ব ১৭-র বাংলা দলে জায়গা করে নিয়েছিল দু’জনেই। কোচ বিনয় রায়ের দাবি, ‘‘কলকাতা মহিলা লিগ শুরু হলে এই দু’জনের ফার্স্ট ডিভিশনের হয়ে খেলার কথা।’’ পোস্টারে এই দু’জনের ছবি দেখে এলাকার অন্য মেয়েরাও খেলার প্রতি আগ্রহী হবে বলে জানান তিনি।

জেলার কন্যাশ্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এ ধরনের প্রতিভাকে তুলে ধরার জন্যই কন্যাশ্রী পোস্টারে এদের ছবি ছাপা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এবং বিদ্যালয়ে সেই পোস্টার সাঁটা থাকবে। এতে অন্য মেয়েরাও উৎসাহিত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree Guskara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE