Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চার্জশিটে রেহাই হাসেমকে, হাঁফ ছাড়ল পরিবার

শান্তশিষ্ট ছেলেটা জঙ্গি কাজকর্মে জড়িত, মাস ছয়েক আগের রাতে এ কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলেন গ্রামের মানুষ। সামান্য টাকার জন্য রোদে-জলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে যিনি গুল-কয়লা বিক্রি করেন, তাঁর সঙ্গে জেহাদ-যোগের অভিযোগ মানতে পারেননি তাঁরা। এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) খাগড়াগড়-কাণ্ডের চার্জশিট থেকে বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা বদ্রু আলম মোল্লা ওরফে হাসেমকে রেহাই দেওয়ার পরে সোমবার তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁর পরিজন ও পড়শিরা।

তালাবন্ধ হয়েই পড়ে রয়েছে বাদশাহি রোডের বাড়িটি। (ইনসেটে) খাগড়াগড়ের বাড়িটির মালিক হাসান চৌধুরী। ছবি: উদিত সিংহ।

তালাবন্ধ হয়েই পড়ে রয়েছে বাদশাহি রোডের বাড়িটি। (ইনসেটে) খাগড়াগড়ের বাড়িটির মালিক হাসান চৌধুরী। ছবি: উদিত সিংহ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

শান্তশিষ্ট ছেলেটা জঙ্গি কাজকর্মে জড়িত, মাস ছয়েক আগের রাতে এ কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলেন গ্রামের মানুষ। সামান্য টাকার জন্য রোদে-জলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে যিনি গুল-কয়লা বিক্রি করেন, তাঁর সঙ্গে জেহাদ-যোগের অভিযোগ মানতে পারেননি তাঁরা। এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) খাগড়াগড়-কাণ্ডের চার্জশিট থেকে বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা বদ্রু আলম মোল্লা ওরফে হাসেমকে রেহাই দেওয়ার পরে সোমবার তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁর পরিজন ও পড়শিরা।

খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনার তিন দিনের মাথায় এক রাতে পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়া থেকে হাসেমকে ধরেছিল পুলিশ। কিন্তু মামলার চার্জশিট থেকে এনআইএ তাঁর নাম বাদ দিয়েছে, এ দিন বিকেলে সেই খবর পাওয়ার পরে হাসেমের বাবা আব্দুল জব্বার মোল্লা বলেন, ‘‘গোড়া থেকেই আমাদের বিশ্বাস ছিল, ছেলে নির্দোষ। এই কয়েকটা মাস শুধু ওর জন্য প্রার্থনা করে এসেছি।’’

তাঁদের প্রতিবেশী ফিরোজ মণ্ডলও বলেন, ‘‘এনআইএ-র অফিসারেরা যে দিন গ্রামে এসেছিলেন তাঁদের বলেছিলাম, হাসেম এ সবে জড়িত নয়। আমাদের বিশ্বাস সত্যি হয়েছে শুনে আনন্দ হচ্ছে।’’ সপ্তাহ তিনেক আগে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন হাসেমের স্ত্রী রেবিনা বিবি। তাই ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় এখন গোটা পরিবার। হাসেমের বাবার আক্ষেপ, ‘‘এতগুলো দিন শুধু শুধু আটকে থাকতে হল ওকে!’’

খাগড়াগড়ে যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেটির মালিক হাসান চৌধুরীর অবশ্য বিশ্বাসই হয় না, ঘটনার পরে এতগুলো দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যেন মনে হয়, দু’চার দিন আগেই তো এত কাণ্ড হল! ভয়ে এখনও খুব একটা বাইরে বেরোই না। জঙ্গিদের লোকজন তো এখনও বাইরে আছে। কী করবে কিছু কি বলা যায়!’’ তাঁর দাবি, ‘‘শুধু চার্জশিট দিলে হবে না, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’’

খাগড়াগড়ের বাড়িটির মতো এখনও ‘সিল’ করা রয়েছে বর্ধমানের বাদশাহি রোডে রেজাউল করিমের বাড়িও। বিস্ফোরণের দিন কয়েক পরে এখান থেকে মিলেছিল বেশ কিছু বিস্ফোরক। তার পাশেই একটি বাড়িতে থাকেন রেজাউলের কাকা খবিরুদ্দিন শেখ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এত কিছুর মধ্যে ও জড়িয়ে পড়েছিল, অথচ আমরা কিছু বুঝতেই পারিনি। রেজাউল যদি দোষ করে থাকে তাহলে শাস্তি পাক।’’

খাগড়াগড়-কাণ্ডের চার্জশিট পেশ হওয়ার পরে এ দিন বিকেলে সে নিয়ে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে রীতিমতো আলোচনা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। বর্ধমানে গিয়ে ডেরা বাঁধার আগে এখানেই ছিল বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজির আস্তানা। এখানে বোরখা ঘর চালাত সে। গোয়েন্দারা জেনেছেন, নিয়মিত সেখানে যাতায়াত ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা-সহ অনেকের। ঘটনার পর থেকে নাসিরুল্লা পলাতক। চার্জশিটেও তার নাম রয়েছে।

বিস্ফোরণের পর থেকে এলাকায় নেই নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালির জহিরুল শেখও। ঘটনার পরপরই তার বাড়ি থেকে ৪১টি জিলেটিন স্টিক মিলেছিল। দফায়-দফায় তার বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। চার্জশিটে অবশ্য জহিরুলের নাম নেই। তবে তার বাবা জুয়াদ আলি শেখ, মা ফতেমা বিবি জানান, দিনকয়েক আগে এনআইএ-র লোকজন বাড়িতে এসে কোর্টের একটি কাগজ দিয়ে গিয়েছেন। জহিরুলের খোঁজ পেলে আদালতে আত্মসমর্পণ করাতে বলে গিয়েছেন তাঁরা। জুয়াদ বলেন, ‘‘ছেলে বাড়ি ফিরলে আমরা তাকে আত্মসমর্পণ করতেই বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE