বাঁ দিকে, বর্ধমানে ফলের পসরা। ডান দিকে, প্রতিমা বাছাই, বর্ধমান ২ ব্লকের মিলগেট বাজারে। ছবি: উদিত সিংহ ও জয়ন্ত বিশ্বাস
পুজো হবে ঘরে-ঘরে। কিন্তু সে পুজোর আয়োজন করতেই নাজেহাল অবস্থা। প্রতিমা থেকে ফলমূল, সব কিছুরই দাম চড়ে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুজোয় হিমশিম বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার বর্ধমান, কালনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমার দাম বেশ চড়া। গত বছর ছোট আকারের যে সব প্রতিমা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এ বার সেই প্রতিমারই দাম ১০০-১৫০ টাকা। গত বারের শ’তিনেক টাকার প্রতিমা এ বার বিক্রি হচ্ছে পাঁচশো টাকার আশপাশে। দাম বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে বর্ধমানের প্রতিমাশিল্পী সমীর পালের বক্তব্য, ‘‘মাটি, সুতো, রং-সহ সব রকম উপকরণের দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রতিমার চাহিদা কমেছে। আমরা সব দিক থেকে মুশকিলে পড়েছি।’’
শহরের আর এক প্রতিমাশিল্পী জয়ন্ত কর্মকার দাবি করেন, ‘‘গত বার এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ৭৫০ টাকা। এ বার তা হয়েছে ১,২৫০ টাকা। রঙের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।’’ শিল্পী জগদীশ পাল বলেন, ‘‘ঠিকমতো মাটির জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়ে গিয়েছে।’’ প্রতিমা শিল্পের সঙ্গে জড়িতেরা জানান, লকডাউনের সময় থেকে একের পরে এক পুজো বন্ধ হওয়ায় কুমোরপাড়ায় আঁধার নেমেছিল। প্রতিমার দাম বাড়লেও লক্ষ্মীপুজোতেও বিশেষ লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে না, দাবি তাঁদের।
শুধু প্রতিমা নয়, পুজোর অন্য নানা উপকরণ কিনতেও হাত পুড়ছে বলে জানান ক্রেতারা। জোগানের সমস্যায় ফুল ও দশকর্মার জিনিসের দাম বেড়েছে বলে দাবি তাঁদের। বিক্রেতারা জানান, বাজারে পদ্মের আকাল রয়েছে। যে পদ্ম আসছে, তার মান খুব একটা ভাল না হলেও দাম প্রায় ১০-১৫ টাকা। কালনার চকবাজারের দশকর্মা ব্যবসায়ী চণ্ডীদাস ভারতী জানান, চাঁদমালা-সহ সমস্ত উপাচারের দাম ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রিও কমে গিয়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, যেহেতু ট্রেন চলছে না, তাই গাড়ি ভাড়া করে সমস্ত জিনিস আনতে হচ্ছে। দামেও তার প্রভাব পড়ছে।
বর্ধমানের উদয়পল্লি, রথতলা, তেঁতুলতলা বাজারে এ দিন দেখা যায়, আপেল, লেবু, শাঁকালু, পেয়ারা— সব ফলই প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দাম প্রায় ১৫০ টাকা কেজি। একটি নারকেল ৪০-৫০ টাকা। উদয়পল্লি বাজারের ফল বিক্রেতা কমল দে, রথতলা বাজারের মন্মথ দাসেরা বলেন, ‘‘গত বছরের থেকে এ বার দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।’’ তেঁতুলতলা বাজারের বিক্রেতা মনোজ সোনকারের বক্তব্য, ‘‘দাম বাড়লেও ক্রেতা কম। যাঁরা কিনছেন, তাঁরাও পরিমাণে অল্প কিনছেন। ফলে, বিক্রি সে ভাবে হচ্ছে না।’’
একে বেশি দাম, তার উপরে করোনা পরিস্থিতিতে প্রসাদ বিলি বন্ধ। তাই অল্প পরিমাণেই জিনিসপত্র কিনেই এ বার পুজো সারার পরিকল্পনা করেছেন, বাজার-ফেরত জানালেন অনেক ক্রেতাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy