দুর্গাপুরের এই স্পা নিয়ে উঠেছে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
অভিযোগ উঠেছে আগেই। হালচাল আন্দাজ করে ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ বন্ধও করে দিয়েছে পুরসভা। তবে কাজের কাজ যে তেমন হয়নি, বাঁকুড়ার ঠিকাদারকে খুনের ঘটনা যেন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।
দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, বিধাননগর, বেনাচিতি-সহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গড়ে উঠেছে বহু বিউটি পার্লার। অনেক পার্লারই আবার চালু করেছে স্পা। আর এমন বেশ কয়েকটিতে স্পা চালানোর নাম করে অবৈধ কাজ-কারবার চলছে বলে অভিযোগ।
এই সব স্পা-তে কাজ করেন অল্পবয়সী অনেক মেয়ে। মালিকের কথা মতো কাজ করতে রাজি না হলে চলে যায় চাকরি। আবার, রাজি হলেই থাকে মোটা টাকার প্রলোভন। রাতারাতি বড় অর্থ উপার্জনের এই ফাঁদে পা দিয়ে দেন অনেকেই। শিল্পাঞ্চলে এই সব স্পা বা পার্লারে ক্রেতারও অভাব নেই। তাই রমরমিয়ে কারবার ফেঁদে বসেছে তারা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের মোট ১২২টি বিউটি পার্লার পুরসভার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। তার মধ্যে পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ সিটি সেন্টার এলাকাতেই চলছে ৩৫টি। বিধাননগরে রয়েছে ১৭টি। বাকি সব পার্লার ছড়িয়ে রয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। মার্চের মাঝামাঝি সিটি সেন্টারের একটি বিউটি পার্লারে দেহ ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ তোলেন সেই বাড়ির মালিক। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। অন্য নানা মহল থেকেও পুরসভার কাছে বিউটি পার্লারগুলির একাংশের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজ-কারবার চালানোর অভিযোগ পায় পুরসভা। তাই আপাতত ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সব দিক খতিয়ে দেখার পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল। তবে পুরসভার এই সিদ্ধান্তের আগে সাতটি বিউটি পার্লার ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করে নেয়। অর্থাৎ, বাকি ১১৫টি পার্লার এখন চলছে বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই।
পুরসভার এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি রয়েছে অনেক পার্লারের মালিকের। তাঁদের মতে, এ ভাবে ব্যবসার একটা ধারা সম্পূর্ণ ব্যাহত না করে দিয়ে নজরদারির ব্যবস্থা চালু হোক। বেনাচিতি এলাকার একটি পার্লারের মালিক বলেন, ‘‘আমাদের এখানে বাইরে যা লেখা আছে, সেই পরিষেবাই শুধু দেওয়া হয়। কোনও বিতর্কের জায়গা নেই। অথচ, আমাদের ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হল না।’’ একই বক্তব্য সিটি সেন্টার, বিধাননগরের কয়েক জন পার্লার এবং স্পা-এর মালিকেরও। তাঁদের দাবি, এই ব্যস্ত জীবনযাপনে শরীর-মনে নানা সমস্যা দেখা দেয়। স্পা-পার্লারে নানা ম্যাসাজ, থেরাপির মাধ্যমে সেই সমস্যা থেকে রেহাই মেলে। বাছবিচার না করে পার্লারগুলি বন্ধ করে দিলে এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন মানুষ।
তবে অনেক স্পা বা পার্লারেই যে এ সবের বাইরে অন্য নানা কারবার হয়, সে কথা স্বীকার করেছেন শহরের বেশ কয়েকটি পার্লারের কর্ণধারেরা। বাঁকুড়ার ঠিকাদার খুনে যে ভাবে দুর্গাপুরের বেঙ্গল অম্বুজায় একটি চালু না হওয়া স্পা-এর নাম জড়িয়েছে, সেখানকার এক মহিলা কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, তাতে এই ব্যবসার উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
ওই খুনে ধৃত শ্রাবণী মণ্ডল ওরফে ডলির বাড়ি আদতে ডিটিপিএস এলাকার সুকান্তপল্লিতে। সোমবার তাঁর বাবা বলেন, ‘‘মেয়ের উচ্চাশাই কাল হয়েছে। রাতারাতি বড়লোক হতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছে।’’ আশপাশের বাসিন্দারা জানান, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে শ্রাবণী ইদানীং যে ভাল রোজগার করছিল, তা তাঁরা বুঝতে পারছিলেন। দামি পোশাকআশাক পরে, দামি মোবাইল ফোন নিয়ে চলাফেরা করতে দেখা যেত তাঁকে।
বেআইনি কাজ-কারবার চলা স্পা-এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কোথাও একটা সীমা টানতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি দিন-দিন আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। সব দিক খতিয়ে দেখে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে শীঘ্রই।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy