Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সহজে ঋণ পেতে ভরসা মহাজনই

সরকারি ভাবে ঋণ দানের নানা ব্যবস্থা থাকলেও মহাজন, আড়তদারদের জাল কেটে এখনও বেরোতে পারেননি অনেক চাষিই। চাষের খরচ সামলাতে বেসরকারি নানা ঋণদান সংস্থার সঙ্গেও জড়িয়েছেন তাঁরা। কেন এই হাল, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। জানা যায়, চাষির পরিবারকে ঋণ দিচ্ছেন মহিলারাই। মহিলাদের ঋণ দেওয়ায় আদায় করতেও অসুবিধা কম। তবে, ছোট ও মধ্যশ্রেণির চাষিরা বাঁধা পড়ে আছেন আড়তদারদের কাছেই।

ঋণের ফাঁদে। নিজস্ব চিত্র।

ঋণের ফাঁদে। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
ভাতার শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০৭
Share: Save:

বেলেন্ডা গ্রামের বড় চাষি শেখ সাইদুল রহমান। ২৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। আলে দাঁড়িয়ে ধান লাগানোর তদারকি করতে করতে জানান, খরিফ মরসুমে চাষ করতে জল ছাড়া গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার থকে ছ’হাজার টাকা খরচ হয়। বোরো মরসুমে সেই খরচই গিয়ে দাঁড়ায় আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকায়। তাঁর দাবি, ‘‘গায়ে-গতরে খেটে চাষ করলে খরচ পুষিয়ে গেলেও নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত চাষিরা যে চাষের খচ সামলাতে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে যাচ্ছেন।’’

সাইদুল রহমানের দাবি যে কতটা ঠিক তার আন্দাজ পাওয়া যায় ভাতারের গ্রামে ঘুরলে। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া, গয়না বন্ধক দেওয়া সবই চলে সেখানে। চলে বেসরকারি নানা সংস্থার থেকে ধার নেওয়ায়। এক ধার শোধ করতে করতে অন্য মরসুমে আর এক ফসলের ধারে জড়িয়ে পড়েন চাষিরা। প্রশ্ন ওঠে, সমবায় সমিতি, ঋণদান সমিতি, সরকারের নানা ঋণদানের ব্যবস্থা, ব্যাঙ্ক থাকার পরেও মহাজনের কাছে হাত পাততে হয় কেন। ভাতারেরই ভূমশোর গ্রামের সরুল শেখ বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে যাওয়া প্রচন্ড সমস্যার। প্রথমত, জমি-সংক্রান্ত অনেক নথি জমা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, আবেদন করার পরে অন্তত এক মাস সময় লাগে ঋণ পেতে। সে জন্য হাতের কাছে থাকা মহাজনদের কাছেই ঋণ নিতে হয়।’’ বেসরকারি নানা সংস্থাও নথিপত্রের ‘চাপ’ না দিয়ে সহজে ঋণ দেওয়ায় ভিড় জমে সেখানেও।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গ্রামীণ মহাজনদের কাছে ঋণ নিলে প্রতি মাসে শতকরা ৭-১০ টাকা সুদ দিতে হয়। সোনার গয়না বন্ধক রাখলে সেই সুদটাই নেমে আসে ২-৩ টাকায়। ভাতারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা উষা গ্রামের বাসিন্দা সাধনকুমার দাস বলেন, “হাতে গোনা কয়েকজন পুরুষ এখন সুদের ব্যবসা করেন। গ্রাম ঘুরলেই বুঝতেই পারবেন বাড়ির মহিলারা এখন মহাজনি কারবার করছেন।’’ জানা যায়, চাষির পরিবারকে ঋণ দিচ্ছেন মহিলারাই। মহিলাদের ঋণ দেওয়ায় আদায় করতেও অসুবিধা কম। তবে, ছোট ও মধ্যশ্রেণির চাষিরা বাঁধা পড়ে আছেন আড়তদারদের কাছেই। ভাতারের কালীটিকুরি কিংবা গলসির ভারিচা গ্রামের চাষিরা জানান, আড়তদারের কাছ থেকে চাষের খরচ বাবদ ঋণ নেন তাঁরা। তার বদলে জমির ধান ‘বাঁধা’ পড়ে যায় ওই আড়তদারের কাছে। ফলে, খোলা বাজারের ধানের দামের থেকে অনেক কম দামে চাষিকে ধান বিক্রি করতে হয় ওই আড়তদারকে।

সিপিএমের জেলা কৃষক সভার সভাপতি উদয় সরকারের অভিযোগ, “বাজার থেকে চাষের জন্য সব সামগ্রীই বেশি দামে কিনতে হয়, অথচ ফসল বিক্রি করতে হয় কম দামে। তার ফলে চাষি মার খাচ্ছে। আর সরকার চুপ করে বসে আছে।’’ যদিও সরকারের দাবি, চাষিদের পাশে সবসময় আছেন তাঁরা। বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ঋণদান সংস্থা চাষিদের সাহায্য করছে। রয়েছে কিসান ক্রেডিট কার্ড। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাষে ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রয়েছে।

কিন্তু ভাতার, গলসি, জামালপুরের চাষিদের দাবি, তথাকথিত বড় চাষিরা সরকারের কিছুটা সুযোগ-সুবিধা পান। কিন্তু ছোট চাষিরা তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেন না। তার আগেই মহাজনের ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে যান তাঁরা। এর বাইরেও রয়েছেন খেতমজুরেরা। তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয় বলে জানাচ্ছেন কৃষকেরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loan Agriculture Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE