ফাইল চিত্র।
বৈধ ব্যবসার পাশাপাশি, পশ্চিম বর্ধমানে রমরমিয়ে চলছে কয়লার ‘অবৈধ’ কারবার— শনিবার সিবিআইয়ের অভিযানে তেমনই প্রমাণ হল, দাবি বিরোধীদের।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পশ্চিম বর্ধমানে ইসিএলের তিনটি এরিয়ায় হানা দিয়ে প্রয়োজনীয় নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা কথা বলেছেন পরাশকোলে ইসিএলের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিক এবং কুনস্তরিয়া গেস্ট হাউসে এরিয়ার এক শীর্ষ কর্তার সঙ্গেও।
সিবিআইয়ের এক আধিকারিক জানান, শুক্রবার ইসিএলের পাঁচ আধিকারিকের বিরুদ্ধে এই তদন্তকারী সংস্থার দুর্নীতিদমন শাখায় (অ্যান্টি কোরাপশন ব্যুরো) অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পরে, এ দিন তদন্তকারী সংস্থার প্রতিনিধিদল অভিযান চালিয়েছে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, পাণ্ডবেশ্বর এরিয়ার জিএম অমিতকুমার ধর, কাজোড়া এরিয়ার জিএম জয়েশচন্দ্র রায় এবং ইসিএলের তিন নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে মাফিয়াদের মদত দেওয়ার অভিযোগ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই নিরাপত্তাকর্মীরা হলেন, কাজোড়ার সিকিওরিটি-ইন-চার্জ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, সদ্য মৃত ধনঞ্জয় রায় ও ইসিএলের সদর দফতরের নিরাপত্তা আধিকারিক তন্ময় দাস। তা ছাড়া, রেলের অজানা কিছু আধিকারিকও এই চক্রে যুক্ত বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। কয়লা চুরি রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বার্তা দিয়েছেন। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে, জেলা পুলিশ-প্রশাসনের তরফেও দাবি করা হয়েছিল, পশ্চিম বর্ধমানে অবৈধ কয়লা পাচার অনেকদিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈনের সঙ্গে এ দিন বহু বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর আসেনি। আর রেলের অজানা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানান, এ প্রসঙ্গে তাঁদের কিছু জানা নেই। ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ও অবৈধ কয়লা কারবারে তাঁদের আধিকারিকদের যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিকে, এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল অবৈধ কয়লা কারবারে যুক্ত। অবৈধ খননের জেরে, ইসিএলের অনেক ভূর্গভস্থ বৈধ খনির ভবিষ্যত বিপন্ন হওয়ার মুখে। বিজেপি যুক্ত না থাকলে, ইসিএল কর্তৃপক্ষ এ সব দেখে চুপ থাকত না। সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার উচিত, অবৈধ কয়লার উৎস খুঁজে বার করে সমস্ত দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।’’
বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, “দলগত ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে কয়লা চুরি বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। আমাদের দলের সাংসদ তথা মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও ব্যক্তিগত ভাবে সে আবেদন করেছেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা জড়িত ছিলেন বলেই কয়লার অবৈধ কারবারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছিল।
অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির মন্তব্য, “আমরা বারবার বলেছি, ইসিএলের আধিকারিক ও সিআইএসএফ-এর মদত না থাকলে, কয়লা মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য সম্ভব নয়। এ দিন ফের তা প্রমাণ হল।” সিআইএসএফ-এর আধিকারিকেরা অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy