Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
এই বর্ষাতেও বদলাল না জেলার জল-দুর্ভোগ, আক্ষেপ বাসিন্দাদের

জল থইথই আদালতে ভিজল নথি

টানা বৃষ্টিতে জল ঢোকে দুর্গাপুর আদালতের গ্রাউন্ড রেকর্ড অফিসে (জিআরও)। ফলে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি ভিজে যায়। জল বেরিয়ে যাওয়ার পরে বৈদ্যুতিন পাখা চালিয়ে নথি শুকনোর ব্যবস্থা করেন কর্মীরা। দুর্গাপুর মহকুমা আদালত চলে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) ভাড়াবাড়িতে।

দুর্গাপুর আদালতে ভিজল নথিও। নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুর আদালতে ভিজল নথিও। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

জলের সঙ্গে যুঝতে এ বার প্রস্তুতি রয়েছে ভাল মতো, ২৪ ঘণ্টা আগেও এমন দাবি করেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু টানা ৪৮ ঘণ্টার বৃষ্টির পরে দেখা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের নানা প্রান্তে প্রতি বছরের মতোই জল-যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগেভাগে ব্যবস্থা না নেওয়াতেই এই হাল।

বাড়িতে জল রেলপাড়

প্রতি বছরই আসানসোলের রেলপাড়় জলে ভাসে। এ বার গাড়ুই নদী সংস্কার করে রেলপাড়ের জল-যন্ত্রণা রুখতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু শুক্রবার দেখা গিয়েছে, গাড়ুইয়ের জল দু’পা়ড় ছাপিয়ে রেলপাড়ে ঢুকেছে। জলমগ্ন হয়েছে প্রায় শতাধিক বাড়ি। সকালে আজাদ বস্তি এলাকায় নদী দেখতে গিয়ে বেসামাল হয়ে জলে পড়ে যায় মহম্মদ সাদাম (১৭) নামে এক জন। পরে তার দেহ উদ্ধার করেন পুলিশ ও দমকলকর্মীরা।

বিপত্তি আদালতেও

টানা বৃষ্টিতে জল ঢোকে দুর্গাপুর আদালতের গ্রাউন্ড রেকর্ড অফিসে (জিআরও)। ফলে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি ভিজে যায়। জল বেরিয়ে যাওয়ার পরে বৈদ্যুতিন পাখা চালিয়ে নথি শুকনোর ব্যবস্থা করেন কর্মীরা। দুর্গাপুর মহকুমা আদালত চলে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) ভাড়াবাড়িতে। একতলায় রয়েছে জিআরও অফিস। আদালতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এখানে জমা রাখা হয়। গ্রেফতারের পর আদালতে তোলার আগে অভিযুক্তকে সাময়িক ভাবে এখানেই রাখা হয়। শুক্রবার সকালে দফতরের কর্মীরা দেখেন, অফিসের বারান্দায় জল জমে রয়েছে। ঘরের ভিতরেও জল থইথই। আলমারির নীচের দিকে রাখা ফাইলপত্র ভিজে গিয়েছে। বেশ কিছু নথি ভাসছে জলে। যেখানে অভিযুক্তদের এনে রাখা হয় সেখানেও জল জমেছে। দফতরের কর্মীরা এর পরে জল বার করার কাজে লেগে পড়েন। ভিজে যাওয়া কাগজপত্র টেবিলের ওপর রেখে বৈদ্যুতিন পাখা চালিয়ে শুকোতে দেওয়া হয়। কর্মীরা জানান, প্রায় প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি হয় বর্ষায়। দুর্গাপুরে নতুন আদালত ভবনের শিলান্যাস হবে রবিবার। নতুন ভবন তৈরি হয়ে গেলে সমস্যা মিটবে বলে আশা কর্মীদের।

সেতুতে বিপদ

রানিগঞ্জের তিরাটে নুনিয়া নদীর উপরে থাকা হাড়াভাঙা সেতু শুক্রবার দিনভর জলমগ্ন ছিল। এলাকাবাসী জানান, এই পরিস্থিতিতে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হয়েছে হাড়াভাঙা, দামালিয়া, তিরাট, চেলোদ গ্রামের বাসিন্দাদের। ২০১৭-য় বৃষ্টিতে সেতুর দু’দিকের সংযোগকারী রাস্তার দু’টি সংযোগস্থল ভেঙে যায়। তা সংস্কার করা হলেও এলাকাবাসী নতুন সেতুর দাবি জানিয়েছিলেন। এ দিন জল নামার পরে দেখা যায়, সেতুর সংযোগকারী রাস্তা ভেঙে গিয়েছে।

জলে জেলা

আসানসোলের কল্যাণপুর এলাকা দীর্ঘক্ষণ জলবন্দি ছিল বলে জানান বাসিন্দারা। একই হাল আসানসোল পুরসভার ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের কুলটি প্রিয়া কলোনিরও। এলাকাবাসী জানান, অনেকের ঘর থেকে আসবাবা পত্র জলে ভেসে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হেমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘‘এ বারের বর্ষাতেও বদলাল না জেলার জল-দুর্ভোগ।’’

প্রশাসনের পদক্ষেপ

জেলা প্রশাসন জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমায় যথাক্রমে ৩৯ ও ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় সর্বত্র তৈরি রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীদের। প্রশাসনের তরফে আসানসোলের রেলপাড় এলাকায় মাইকে করে জলে না নামা-সহ নানা বিষয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রেলপাড় এলাকায় রয়েছে পুলিশ পিকেটও। আসানসোলে জলমগ্ন এলাকায় বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্বে রয়েছেন মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়। তিনি বলেন, ‘‘আসানসোল পুরসভা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে এখনও ত্রাণ সরবরাহের মতো পরিস্থিতি হয়নি।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, হাড়াভাঙা সেতুটি আধুনিক ভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম রায় বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে কিছু জায়গা জলমগ্ন হয়েছে। এক জন তলিয়ে গিয়েছেন। আগামী তিন দিন পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monsoon Rain Court Document Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE