Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বধূকে খুনের কথা অস্বীকার শ্বশুর, শাশুড়ির

বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে সনিয়াকে নির্যাতন করা হতো। সনিয়ার উধাও হওয়া নিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানান, সনিয়া বাপের বাড়ি গিয়েছেন। সম্প্রতি সনিয়ার বাবা ও মা দুর্গাপুরে আসেন মেয়ের খোঁজে। তাঁদের জানানো হয়, সনিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৩
Share: Save:

সেপ্টেম্বরের গোড়ায় এক মহিলার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয় তামলা নালায়। দুর্গাপুরের মহিষ্কাপুরের বাসিন্দা সনিয়া মির্দাকে (২২) নামে ওই মহিলাকে খুনের অভিযোগে তাঁর শ্বশুর মৌলিন্দ্র, শাশুড়ি কুন্তী ও স্বামী রাজেশকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে তাদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

গত ২ সেপ্টেম্বর তামলা নালা থেকে উদ্ধার হয় বস্তাবন্দি অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার দেহ। ওই দিন থেকেই সনিয়াকে আর এলাকায় দেখেননি পড়শিরা। বছর দুয়েক আগে ঝাড়খণ্ডের দুমকার বাসিন্দা সনিয়ার বিয়ে হয় এক বেসরকারি হাসপাতালের ঠিকাকর্মী রাজেশের সঙ্গে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে সনিয়াকে নির্যাতন করা হতো। সনিয়ার উধাও হওয়া নিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানান, সনিয়া বাপের বাড়ি গিয়েছেন। সম্প্রতি সনিয়ার বাবা ও মা দুর্গাপুরে আসেন মেয়ের খোঁজে। তাঁদের জানানো হয়, সনিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে ফিরে যান বধূর বাবা, মা। পড়শিদের দাবি, বুধবার সকালে চেপে ধরতে সনিয়াকে খুনের কথা স্বীকার করেন মৌলীন্দ্র। পুলিশ এসে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে থানায় ডেকে পাঠানো হয় রাজেশকে। রাতের দিকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।

পড়শিদের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবে মৃতার শ্বশুরের তন্ত্র-সাধনার যোগ থাকতে পারে। মৌলিন্দ্রর টালির চালের প্লাস্টারহীন দেওয়ালের ঘুপচি ঘরের মেঝেতে সার দিয়ে রয়েছে বহু ঠাকুর-দেবতার ছবি। গভীর রাত পর্যন্ত ওই ঘর থেকে ধুনোর গন্ধ, মন্ত্রোচ্চারণের শব্দ আসত বলে এলাকাবাসী জানান। তাঁদের দাবি, বুধবার তাঁদের সামনে খুনের ঘটনা স্বীকার করেন মৌলিন্দ্র।

তবে এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে মৌলিন্দ্র বলেন, ‘‘বৌমা আত্মঘাতী হয়েছে। খুন করিনি। ভয়ে আমি একাই দেহ বস্তায় ভরে তামলায় ফেলে আসি।’’ সনিয়াকে মারধরের অভিযোগও তিনি মানতে চাননি। তবে মৌলিন্দ্র আদালতে যাওয়ার পথে দাবি করেন, এক টোটো চালক তাঁর ‘গুরু’। সেই গুরু আবার তন্ত্র-সাধনা করেন বলে এলাকাবাসী জানান। তবে তন্ত্র-সাধনার জেরেই খুন, তা অস্বীকার করেন মৌলিন্দ্র। কুন্তীও আদালতে যাওয়ার পথে দাবি করেন, তিন জনেই কাজে বেরিয়েছিলেন। বাড়িতে সনিয়া একাই ছিলেন। দুপুরে তাঁরা বাড়ি ফিরে দেখেন, বৌমার ঝুলন্ত দেহ। এর পরে ‘ভয় পেয়ে’ রাতে দেহ সরিয়ে ফেলা হয়।

পুলিশ অবশ্য তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলাই দায়ের করেছে। তদন্তকারীরা জানান, সনিয়ার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া তিনজনের কথাবার্তায় বেশ কিছু অমিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সহ-সম্পাদক তথা জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অরুণকিরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনা যা-ই ঘটুক, তা পুলিশ তদন্ত করবে। কিন্তু এখনও তন্ত্রসাধনার মতো কুসংস্কার যে চলে আসছে, তার বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।’’ পুলিশ জানায়, ধৃতদের আরও জেরা করে ঘটনার প্রকৃত কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Murder Daughter In Law
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE