Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
International Women's Day

কেউ স্কুলছুট না হয়, প্রচার কালিদাসীর

শক্তিগড়ের বড়শুলের সাগরদিঘি পাড়ের বছর পঞ্চাশের কালিদাসী কোঁড়াকে এ সবের জন্য সকলেই এক ডাকে চেনেন।

কালিদাসী কোঁড়া। নিজস্ব চিত্র

কালিদাসী কোঁড়া। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
শক্তিগড় শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০০:৫৫
Share: Save:

আলুর জমিতে কাজে নেমেছে কোনও কিশোর বা কিশোরী, সকালে রাস্তার ধারে চু-কিতকিত খেলছে কোনও বালিকা— এক বার তাঁর চোখে পড়লে হয়। যতক্ষণ না তাদের স্কুল পাঠাতে পারছেন, শান্তি পান না তিনি। কোনও পড়ুয়া দীর্ঘদিন স্কুলে যাচ্ছে না বা পড়াশোনা ছেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে কাজের খোঁজে যাচ্ছে, এমন খবর কানে এলেই সটান হাজির হয়ে যান বাড়িতে। পরিবারের লোকজনকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ছেলেমেয়েকে স্কুলে না ফেরানো পর্যন্ত ক্ষান্ত হন না।

শক্তিগড়ের বড়শুলের সাগরদিঘি পাড়ের বছর পঞ্চাশের কালিদাসী কোঁড়াকে এ সবের জন্য সকলেই এক ডাকে চেনেন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ‘দিদিমণি’ নামে। তিনিই এখন জেলায় সাক্ষরতা অভিযানের ‘মুখ’। নিরক্ষর মানুষদের স্কুলে যাওয়ার গান শোনাচ্ছেন, এলাকার ছেলেমেয়েরা যাতে স্কুলমুখী হয়, সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পড়াশোনা অবশ্য শেখা ছিল না তাঁরও। ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার করছিলেন। ছোট থেকেই ভাদু-গান করতেন। রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠন করার পরে লোক শিল্পীদের জন্য মাসে উৎসাহ ভাতার ব্যবস্থা হয়। নানা রকম অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে তাঁদের। ‘শিল্পী’ হিসেবে সে সবের সূত্রেই গ্রামের স্কুলে গিয়ে সই করা শিখতে হয় কালীদাসীকে। কয়েক বছর আগে সাক্ষর হন তিনি। তার পরেই তিনি গান বাঁধেন, ‘চল ভাদু চল, স্কুলে চল, আর নিরক্ষর থাকব না’। গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাক্ষরতা অভিযানে সেই গান করেন তিনি।

প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘নানা গ্রামে ঘুরে মনে হয়, শুধু গান গাইলেই তো সবাই স্কুলে যাবে না। সব বাচ্চা স্কুলে যাচ্ছে কি না, সেটাও দেখা দরকার। অন্য গ্রামে গিয়ে তো সেটা খেয়াল রাখা যায় না। সে জন্য নিজের এলাকার বাচ্চারা যাতে স্কুলে যায়, পড়তে বসে, সেটা নজরে রাখি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘জীবনে কোনও দিন স্কুলে যাইনি। আমার ছেলেমেয়েদেরও সে ভাবে স্কুলে পাঠাতে পারিনি। আসলে তখন পড়াশোনার বিষয়টা তো জানতামই না। এখন দুঃখ হয়। তাই পাড়ার সবাই যাতে স্কুলে যায়, সেই চেষ্টা করি।’’

এলাকার স্কুল-পড়ুয়া মনিকা ভট্টাচার্য, তৃষিকা পালদের কথায়, “সকালে কেউ মাঠে গেলে বা সন্ধ্যার পরেও রাস্তায় খেলা করলে দিদিমণি বকেন। আমাদের বাড়ি বা স্কুলে বই নিয়ে বসিয়ে দেন। আবার গানও শোনান।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সতীশ মণ্ডল, সন্তোষ মণ্ডল, সান্ত্বনা পাল, সুমন্ত কোড়ারা বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো কেন দরকার, তা কালীদাসী এলাকার মানুষজনকে বোঝান।’’ তাতে যে কাজ হয়েছে, মানছেন বড়শুল নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকির আলি মল্লিক, অন্নদাকালী প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মণ্ডলেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের স্কুলে তো পাঠিয়েই থাকেন। আবার স্কুলছুট কমাতেও ওঁর সাহায্য নেওয়া হয়। অনেক পড়ুয়া আবার স্কুলে ফিরে এসেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

International Women's Day Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE