Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Car Theft

গাড়ি চুরিতে কি একটাই চক্র, তদন্ত

কমিশনারেটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুর্গাপুর থানা ৪২টি মোটরবাইক উদ্ধার করেছে। এর কিছু দিন পরে অণ্ডাল থানা ১৮টি, জুলাইয়ে রানিগঞ্জ থানা ১২টি মোটরবাইক উদ্ধার করে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ০০:২৮
Share: Save:

জেলা জুড়ে বারবার গাড়ি, মোটরবাইক, স্কুটি উদ্ধারের ঘটনা সামনে আসছে। এই ‘কারবারে’ জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এই সমস্ত ঘটনার নেপথ্যে একটিই চক্র কাজ করছে, না কি একাধিক চক্র সক্রিয়— এই বিষয়টিই বিশেষ ভাবে নজরে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের একাংশ।

কমিশনারেটের এসিপি (‌সেন্ট্রাল) তথাগত পাণ্ডেও বলেন, ‘‘এত দিন এই গাড়ি-বাইক চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ধরা পড়েছে, তারা সবাই একই চক্রের সঙ্গে জড়িত কি না, না কি একাধিক চক্র রয়েছে, তা দেখা হচ্ছে। একাধিক চক্র থাকলে, সেগুলির মধ্যে কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

কমিশনারেটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুর্গাপুর থানা ৪২টি মোটরবাইক উদ্ধার করেছে। এর কিছু দিন পরে অণ্ডাল থানা ১৮টি, জুলাইয়ে রানিগঞ্জ থানা ১২টি মোটরবাইক উদ্ধার করে। অগস্টে জামুড়িয়া থানা ১৪টি মোটরবাইক, একটি স্কুটি এবং পাঁচটি গাড়ি উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে। সব ক’টি মোটরবাইক, গাড়িই চুরি করা বলে পুলিশের দাবি। এ পর্যন্ত এই চুরি চক্রের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে জেলার নানা থানা এলাকায় মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ধৃতেরা পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বাসিন্দা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মোটরবাইক চুরিতে জড়িত সন্দেহে ধৃতেরা দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং ঝাড়খণ্ডের নলা ব্লক, ধানবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘মাস্টারকি’ দিয়ে মোটরবাইক চুরি করছে। এই চুরি করা মোটরবাইক আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক ভাবে জড়ো করা হচ্ছে।

এ দিকে, গাড়ি চুরির ক্ষেত্রে কিছু ‘নতুন’ তথ্য হাতে এসেছে বলে তদন্তকারীরা জানান। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, জামুড়িয়ায় এই চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে পাকড়াও করে জানা গিয়েছে, তারা আসলে চার জন মিলে এই কারবার চালাত। গাড়ি চুরির তিনটি ‘স্তর’। প্রাথমিক ভাবে, গাড়ি ভাড়ায় খাটান, এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খোঁজখবর করে ‘টার্গেট’ করা হত। এলাকায় ঘুরে ঘুরে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ করে অভিযুক্তদের অনেকেই, দাবি পুলিশের। তার পরে, দ্বিতীয় পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ করে রীতিমতো স্ট্যাম্প পেপারে সই-সহ চুক্তির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির থেকে তাঁর গাড়ি ‘লিজ’-এ ভাড়া নেওয়া হয়। এর পরে, ‘সুযোগ’ বুঝে, মালিকের অগোচরে ক্রেতা দেখে সেই গাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

কিন্তু, এই বিক্রিরও বেশ কয়েকটি স্তর রয়েছে। যেমন, পুলিশ জানায়, মোটরবাইকের ক্ষেত্রে তা চুরি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজেদের ‘ডেরা’য় নিয়ে গিয়ে নম্বর প্লেট বদলে ফেলে অভিযুক্তেরা। তার পরে ‘গুণমান অনুযায়ী’ বাইক বিক্রি করা হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকায়। একই ভাবে বদলে ফেলা হয় গাড়ির নম্বর প্লেটও। অভিযুক্তেরা যে নম্বর থেকে গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, সেই নম্বরটিও বদলে ফেলা হয় গাড়ি চুরির পরেই।

তার পরে সেই বাজারচলতি পুরনো গাড়ির অর্ধেকেরও কম দামে ভিন্ রাজ্য এবং এলাকার ক্রেতাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। ক্রেতা খুঁজতে দুর্গাপুর, আসানসোল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ-সহ জেলার নানা প্রান্তের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গিয়ে খোঁজখবর করে অভিযুক্তেরা। সেখান থেকেই মেলে ‘সম্ভাব্য ক্রেতা’র ঠিকানা। সেই মতো যোগাযোগ করা হয় ক্রেতাদের সঙ্গে। এসিপি (‌সেন্ট্রাল) তথাগতবাবুর দাবি, ‘‘চোরাই গাড়ির ভুয়ো কাগজপত্রও তৈরি করে বিক্রি করে দেয় অভিযুক্তেরা। কাগজ-সহ অনেক কম দামে গাড়ি পেয়ে ক্রেতাও প্রলোভনের শিকার হন।’’

তথাগতবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ খনি এলাকায় গাড়ি, মোটরবাইক চুরি চক্রকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাই, সাফল্যও মিলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Car Theft Asansol Burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE